
মোঃ রায়হান পারভেজ নয়ন, নিলফামারী প্রতিনিধি
গ্রামীণ জনপদে কৃষকের প্রধান শত্রু ইঁদুর। ধান, গম, আলু, ভুট্টা, পাটসহ নানা ধরনের ফসল মাঠে ও ঘরে জমা রাখা খাদ্যশস্যে প্রতি বছর বিপুল ক্ষতি করে থাকে। আধুনিক যুগে নানা ধরনের বিষ ট্যাবলেট, রাসায়নিক ও ইঁদুর নিধন যন্ত্র ব্যবহার করা হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে আবারও গ্রামে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পুরনো ঐতিহ্যবাহী বাঁশের ফাঁদ।
স্থানীয় কৃষকদের ভাষ্যমতে, এই ফাঁদ ব্যবহার করা সহজ, খরচ একেবারেই কম এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। যেখানে বিষ ব্যবহার করলে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু ও পাখির জন্য ঝুঁকি তৈরি হয়, সেখানে বাঁশের ফাঁদ নিরাপদ। এক রাতে একাধিক ইঁদুর ধরা সম্ভব হওয়ায় কৃষকেরা এর কার্যকারিতায় খুশি।
নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার কয়েকজন কৃষক জানান, আধুনিক বিষ ট্যাবলেট বা রাসায়নিক ব্যবহারে অনেক সময় খাদ্যশস্য দূষিত হয়, ফলে পরিবারের সদস্যরা পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু বাঁশের ফাঁদে সেই ঝুঁকি নেই। গ্রামের কারিগররা সহজেই বাঁশ কেটে, ফিতা আকারে সাজিয়ে এবং লোহার তার বা সুতো দিয়ে বাঁধাই করে এই ফাঁদ তৈরি করতে পারেন। খরচ হয় খুব সামান্য, কিন্তু ফলাফল হয় চোখে পড়ার মতো।
কয়একজন স্থানীয় কৃষক বলেন,
আমরা আগে বিষ ট্যাবলেট ব্যবহার করতাম, কিন্তু এতে অনেক ক্ষতি হতো। এখন আবার বাঁশের ফাঁদ ব্যবহার শুরু করেছি। এতে কোনো ঝুঁকি নেই, আবার এক রাতে বেশ কয়েকটা ইঁদুর ধরা যায়।
শুধু কৃষকই নয়, স্থানীয় বাঁশ কারিগরদের জন্যও এটি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে। একসময় প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই শিল্প আবার চাহিদা ফিরে পাচ্ছে। গ্রামে এখন অনেকেই বাঁশের ফাঁদ তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন, ফলে পরিবারেও বাড়তি আয়ের পথ সৃষ্টি হচ্ছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি টেকসই কৃষির জন্য উপযোগী। এতে পরিবেশ রক্ষা হয়, মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে এবং স্থানীয় অর্থনীতিও সচল হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্রামীণ জীবনের এসব সহজ সমাধানকে আরও উৎসাহিত করা দরকার।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও ঐতিহ্যবাহী সমাধান কতটা কার্যকর হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ইঁদুর মারার বাঁশের ফাঁদ। দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যা গ্রামীণ জীবনের সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব এক বাস্তব চিত্রকে সামনে নিয়ে আসছে। যা নিয়ে এখন কৃষক দের মধ্যে অনেক আগ্রহ প্রকাশ করছে এর মধ্যে ডিমলা সদর ইউনিয়নের কৃষক আবুুল কাশেম বলেন এই বাঁশের ফাঁদ দিয়ে আমি অনেক উপকৃত যার মাধ্যমে আমার অল্প খরচে অধিক উপকার হয়। এই পদ্ধতির আগে কীটনাশক পদ্ধতি দিয়ে অনেক খরচ বহন করতে হয়েছে কিন্তু কেমন উপকৃত হতে পারিনি।