
লেখিকা: নুসাইবা আক্তার তানহা
রাত ২:৪৭ বাজে। মাহিয়ার নিঃশ্বাস যেন কোপানল হয়ে উঠেছে! রুশানের দেওয়া উপহারগুলো একে একে খুঁজে বের করতে লাগল। তার দেওয়া প্রথম জন্মদিনের সেই পছন্দের বিভিন্ন রঙের চুড়ি, নীল রঙের শাড়িটা খুঁজে বের করল! কিছুক্ষণ চুপ করে সাশ্রুসজল নয়নে তাকিয়ে রইল। এরপর নেত্রপল্লব বন্ধ করল — ভিতরে ক্রোধের আগুন যেন বেড়েই চলছে মাহিয়ার!
তার মনটা যেন পিঞ্জরবদ্ধ — এমনই মনে হচ্ছে। রোষারক্ত নয়নে আবার তাকাল। বলল,
“চিৎকার দিয়ে কান্না করলে হয়তো মনটা একটু হালকা হতো!”
এরপর রুশানের দেওয়া প্রথম চিঠিটা খুঁজে পেল — যেটা পড়েই অবলোকনমাত্র রুশানকে ভালোবেসে ফেলেছিল। একে একে সবকিছু খুঁজে পাওয়া গেল। সেগুলো নিয়ে নির্জনে কাতর স্বরে কান্না করতে লাগল। চোখের সামনে ভেসে উঠল আগের বছরের জন্মদিন। ছাদে রুশান নিজেই সব আয়োজন করেছিল। মাহিয়া বলল —
“অতঃপর রাত ১২টায় ছাদে আমাকে সারপ্রাইজ দিয়েছিল! আমি সেদিন এতটাই খুশি হয়েছিলাম, মনে হচ্ছিল এই তো — আমার ভালো থাকার জন্য আসল মানুষটাকে পেয়ে গেছি! কতটা আনন্দে ছিলাম, সেটা হয়তো বলে বোঝানো যাবে না।”
আজও সেই জন্মদিন। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে — সবকিছুই এখন ঠিক উল্টো। মাহিয়া কান্না করতে করতে বিরবির করে বলতে লাগল,
“এখনই দুনিয়া থেকে বিদায় নেব… এ জীবন রেখে কি হবে?”
—
অতীতের স্মৃতি…
ভার্সিটির প্রথম দিনেই পরিচয় হয় রুশানের সাথে। পড়ালেখায় আমাকে সাহায্য করত — যেন সবসময় আমার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছিল! এরপর শুরু হয় গল্প করা, মেসেঞ্জারে চ্যাটিং, ক্লাস পালিয়ে ঘুরতে যাওয়া… সবমিলিয়ে মনে হচ্ছিল, একজন যোগ্য জীবনসঙ্গী বুঝি পেয়ে গেছি!
তার প্রতি বিশ্বাস ছিল অন্ধের মত।
এরপর বাসা থেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি হতে লাগল। বিষয়টি রুশানকে জানালে সে বলে —
“এখন তো পড়াশোনা করি!”
আমি বললাম —
“তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো, তাহলে শুধু বিয়েটা করো। লেখাপড়া শেষ করে পরে না হয় একসাথে সংসার করবো!”
রুশান বলল —
“হ্যাঁ, তোমাকেই ভালোবাসি! আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। একটু সময় দাও…”
এইভাবে আশায় রাখল।
কিন্তু দিনের পর দিন পার হতে লাগল — কোনো সিদ্ধান্ত নেই!
জিজ্ঞেস করলে অন্য কথা বলে এড়িয়ে যেত। কয়েক মাস কেটে গেল…
একদিন হঠাৎ বলে,
“তুমি বিয়ে করে ফেলো!”
মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল!
“তুমি সেটা আগেই বলতে পারতে না?”
বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে লাগল।
শেষপর্যন্ত বলল —
“তোমাকে আমার আর আগের মতো ভালো লাগে না…”
শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
বাসায় ফিরে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিল মাহিয়া।
—
পরিবর্তনের সূচনা…
এতকিছু ভাবতে ভাবতে পাশের বাসা থেকে গানের আওয়াজ আসছে। ভাবনার ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে মাহিয়া। এরপর রুশানের দেওয়া সব উপহার ছাদে নিয়ে গিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় —
“কিছুটা হলেও মনের আগুন তো নিভবে!”
ফজরের কিছু আগে — মসজিদের মাইকে কোনো এক বক্তার ওয়াজ চলছিল। হঠাৎ করে একটি কথা তার কানে ভেসে এলো:
“আল্লাহর পরিকল্পনার বাইরে কিছু হয় না… সময় থাকতে রবের নিকট ফিরে আসুন। আপনি কিছু হারিয়েছেন? আল্লাহ আপনার জন্য উত্তম কিছু রেখেছেন!”
এই কথাটা শুনে মাহিয়ার মনে যেন প্রশান্তি ফিরে এল।
সে বুঝল — হয়তো এটাই হেদায়েতের রাস্তা!
—
নতুন জীবনের সূচনা…
দ্রুত গিয়ে ওজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে পড়ল। আল্লাহর কাছে মন খুলে কেঁদে ফেলল।
এরপর ইউটিউবে ভিডিও দেখে বিভিন্ন গুনাহ সম্পর্কে জানতে লাগল এবং অনুতপ্ত হলো। ইসলামী বই পড়া শুরু করল। মাকে পর্দার বিধান সম্পর্কে জানাল।
সারাদিন ইস্তেগফার, দরূদ শরীফ পড়ে কাটায়। এখন আর দুশ্চিন্তা মনে আসে না।
আল্লাহ তায়ালা যাকে হেদায়েত দান করেন — সে কতই না ভাগ্যবান! সুবহানাল্লাহ