মোঃ রায়হান পারভেজ নয়ন
নীলফামারী প্রতিনিধি
নীলফামারীসহ তিস্তা অববাহিকার জেলাগুলোতে আবারও দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে ইতোমধ্যে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। তিস্তার পানি বিপদসীমার অনেক ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে, ফলে ডালিয়া, ডিমলা, জলঢাকা, গঙ্গাচড়া ও আশপাশের নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় মানুষ ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের ওপর, স্কুল-কলেজ ভবন ও আশ্রয়কেন্দ্রে।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় প্রতি বছর তিস্তার এমন রুদ্ররূপ কেন দেখা দেয়? কেন আগেভাগে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না নদী শাসনের নানা প্রকল্প কাগজে-কলমে থাকলেও মাঠপর্যায়ে এর বাস্তব প্রয়োগ দেখা যায় না। একদিকে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের পানিনিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ খনন ও বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলের মানুষকে প্রতি বর্ষায় এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বর্তমানে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো মানবিক সহায়তা ও দ্রুত ত্রাণ কার্যক্রম নিশ্চিত করা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ফসল সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য প্রয়োজন নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবা ও শুকনো খাবার। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের সুরক্ষা এখন অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে তিস্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কার্যকর দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা না হলে এই দুর্ভোগের অবসান হবে না। সরকারের উচিত স্থানীয় জনগণ, বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক নদী কমিশনের মতামত নিয়ে একটি টেকসই তিস্তা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
তিস্তা শুধু একটি নদী নয় উত্তরাঞ্চলের প্রাণ। এই নদীই কৃষি, জীবিকা ও সংস্কৃতির মূলভিত্তি। তাই তিস্তাকে রক্ষা করা মানে উত্তরাঞ্চলের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করা। এখন সময় কাজের, প্রতিশ্রুতির নয় মানুষ বাঁচানোই এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।