শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

একটা সেমিনারে আমার একটা বক্তৃতা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি

Coder Boss
  • Update Time : বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২৩ Time View

 

বিষয়ঃ স্বাধীনতার ৫৪ বছরে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা!
দেবিকা রানী হালদার।

মাননীয় সভাপতি, উপস্থিত প্রধান অতিথি, অন্যান্য গণ্যমান্য সন্মানিত অতিথি বৃন্দ, কবি সাহিত্যিক ও দর্শক ভাই বোনেরা!

আমি আগে একটু “প্রত্যাশা’ বলবো পরে “প্রাপ্তি” বলবো!

১৯৭১ সাল পর্যন্ত ইতিহাস আমাদের পাকিস্তানের সাথে বৈষম্যের ইতিহাস। যখন পাকিস্তানে ১০ টা অস্ত্র কারখানা তৈরি হয়েছে তখন চেচিয়ে একটা অস্ত্র কারখানা পাওয়া গেছে গাজীপুর অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরী! ৮ টা মেশিন টুলস কারখানা পশ্চিম পাকিস্তানে তৈরির পর চেচিয়ে একটা মেশিন টুলস কারখানা গাজীপুরে স্থাপন করে দিছে! এমনি উন্নয়ন বৈষম্যের জন্য, ভাষার উপর আঘাত আসার জন্য, সমস্ত পাকিস্তানে ৪% লোক উর্দু তে কথা বলেন, ৬২% লোক বাংলায় বাকীরা পাঞ্জাবি, বেলুচি, সিন্ধ ভাষায় কথা বলেন! সবার শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি নাটক সিনেমা গান আলাদা আলাদা ভাষায় চলয়মান! তখন রাষ্ট্র ভাষা উর্দুর জন্য স্বয়ং আমাদের জাতির পিতা কার্জন হল বক্তৃতায় বাঙালি কে আলাদা ভাবে চিঁহ্নিত করলেন! ১৯৫২ তে বাঙালির রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হলো, এসব ভুলের জন্য ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সব দল মিলে “যুক্ত ফ্রন্ট ” গঠন করে নির্বাচন করলেন, জয়লাভ করলেন, ৫১ দিনের মাথায় অস্ত্রের মুখে ইস্কান্দার আলী মির্জা ক্ষমতা কেড়ে নিলেন! পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা কারাগারের ঘানি টানলেন অনেকে!

১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান অরক্ষিত, কোন অস্ত্র নাই, ভারত ইচ্ছে করলে ২/৪ ঘন্টায় পূর্ব পাকিস্তান দখল করতে পারতো কিন্তু তা তারা করে নাই। যুদ্ধ হয়েছে পশ্চিম সেক্টরে। বাঙালিরা অনেকে জীবন দিয়ে যুদ্ধ করেছে! কিন্তু পাকিস্তান সেবাহিনীতে তাদের মূল্যায়ন করা হয় নাই। সর্বোচ্চ প্রমোশন কর্নেল, এবং
আমাদের “সবে ধন নীলমনি”, কর্নেল ওসমানী!

প্রিয় দর্শক, এমনি অনেক বঞ্চনার জন্য ১৯৭০ এর নির্বাচনে বাঙালিরা বাঁধলো জোট, একই বাক্সে দেবে ভোট! বাঙালি একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলো।
ক্ষমতা না দিয়ে ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ উপহার দিলো ” “অপারেশন সার্চ-লাইট” সবশেষে স্বাধীনতার ঘোষনা এলো, বাঙালি ঝাপিয়ে পড়ে যুদ্ধ করলো, লুঙ্গি পরে মাথায় গামছা বেঁধে !
৩০ লক্ষ বাঙালি শহীদ হলো, ৪ লক্ষ মা বোন ইজ্জত দিলো,
কানাডার ডাক্তার যিনি ধর্ষিতদের চিকিৎসা দিতে এসেছিলেন তাদের দেয়া ধর্ষিতের সংখ্যা বললাম! ১ লক্ষ জারজ সন্তান জন্ম হলো, যা ততকালীন সরকার মায়েদের কলঙ্ক ঘুচাতে ইউরোপীয় দেশগুলো কে ডেকে দত্তক দিয়ে একটা ফয়সালা করলেন!

প্রত্যাশা ছিলো অনেক ঃ
বাংলাদেশ সব ধর্মের লোক মিলেমিশে স্বাধীন করেছে, ভারত স্বাধীনতায় হিন্দু থেকে বেশী মুসলমান জীবন দিয়েছিলেন তেমনি বাংলাদেশ স্বাধীনতায় মুসলমান থেকে হিন্দু মরেছে বেশী।
২. সম্পদের সাম্য বন্টন হবে। ইস্পাহানি বাওয়ানী আদমজীর মত ২২ পরিবারের ধনী গড়ে উঠবে না!
৩. চাকুরী বাদা, সেনা পুলিশ সব জায়গায় বৈষম্যহীন নিয়োগ হবে।
৪. সবার জন্য শিক্ষা হবে, নারী শিক্ষার প্রসার ঘটবে!
৫. ঘি ভাত কোর্মা পোলাও নয়, ডাল-ভাত সবাই পাবে!

প্রিয় দর্শক, স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে যত রিজার্ভ ছিলো সব পাকিস্তান নিয়ে গিয়েছিলো। তা প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার যার অর্ধেক আজ-ও পাওনা নিয়ে আলোচনা হয়!
খালি হাতে বাংলাদেশ চলা শুরু হয়েছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের আসল বাহন ছিলো লঞ্চ স্টীমার নদীপথে! সব নদীপথে মাইন বিছানা ছিলো, তিন মাস পরিবহন ব্যবস্থা অচল থাকায় ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ ছিলো প্রায়। স্থল পথে ছিলোনা ব্রিজ কালভার্ট ফেরি। সিদ্ধিরগঞ্জ গোয়ালপাড়া ভেড়ামারা তিনটা পাওয়ার স্টেশন ছিলো মাত্র, যা পাকিস্তান আর্মি ধ্বংস করে দিয়ে গেছিলো, এসব রাশিয়া মাত্র তিন মাসে চালু করেছিলো, ২ মাসে মাইন সুইপার সব নদী পরিষ্কার করেছিলো, আমরা OIC, UNO সদস্য হতে পেরেছি! আবার মুসলিম উম্মাহ প্রতিষ্ঠায় ইসলামি ফাউন্ডেশন, ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ, মদ আমদানি বন্ধ , তবলীগের জায়গা পাওয়া গেলো তুরাগ তীরে ১৬০ একর, কবি নজরুল কে বাংলাদেশে আনা হলো, কমলদাশ কে দিয়ে রেডিও স্টেশন চালু ও সাংবাদিক মূসা স্যার কে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়া সর্বাত্মক দায়িত্ব দেয়া হলো!
১৯৭৪ সালে কেনা খাদ্যের জাহাজ ফিরিয়ে নিয়ে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে দিলো বিদেশি দেশ! পর পর দুজন রাষ্ট্র পতি হত্যা হলো, পাকিস্তানের মত সামরিক মোড়কে বেঁধে দেয়ার চেষ্টা ছিলো বিদেশি পরাশক্তির, পাকিস্তান মিয়ানমারের মত সামরিক শাসন আজীবন বাংলাদেশে, কিন্তু বাঙালি স্বাধীন চেতা তারা ১৯৯০ সালে গনতান্ত্রিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনলো দেশকে।

বন্ধুগন, প্রাপ্তি বাংলাদেশের কম না! ভারত থেকে সেনিটেশন, নারী শিক্ষা, খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা, ক্ষমতায়নে নারী, আরো অনেক দিকে এগিয়ে ছিলো বাংলাদেশ। আমাদের পূর্বের শাসক ভাই পাকিস্তানের জনগন বলা শুরু করেছিলো আমরা বাংলাদেশের মত হতে চাই। যে বাংলাদেশ কে বিশ্ব চিনতো না, সে দেশের বিমান বন্দরে চীনের বিদেশ মন্ত্রী এসে সেখানেই মিটিং করে চলে গেছেন এমন গুরুত্ব বাংলাদেশের বেড়েছিলো! বিদেশি মডেলে রাস্তাঘাট ব্রিজ মেট্রোরেল টানেল হাইওয়ে পাতাল রেলে প্রজেক্ট এমনি শত দিকে বিশ্ব মানে উঠে এসেছিলাম আমরা!
বাংলাদেশের নাম বললে, এখন বিশ্বের সব দেশ চিনে! এদেশে এখন সাবমেরিন, ড্রোন আছে, যুদ্ধ অস্ত্রে গ্লাবাল ফায়ার ফক্স রিপোর্টে আমাদের অবস্থান ৩৫ তম! আমাদের দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ একসময় ৪০ বিলিয়নে উঠেছিলো, বিদেশি বিনিয়োগ হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলো!

সব শেষে বলবো, ব্যক্তি বাঙালি লোভী! নাগরিক সততা থাকলে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেতো! আজ যেখানে আছি এই অবস্থানে আশির দশকে আমরা চলে যেতাম। আমাদের উন্নত দেশের তালিকায় যাওয়া, পরামানিক বিদ্যুৎ তৈরি পরমাণু ওয়ার হেড তৈরির প্রথম পদক্ষেপ, সংযুক্ত আরব আমীরাত আমাদের দেখাদেখি পরমানু বিদ্যুৎ তৈরি তে গেছে, ইরান পরমাণু বিদ্যুৎ তৈরির জন্য কেবল ২৫ বিলিয়ন ডলার চুক্তি করলো রাশিয়ার সাথে, এইটা ই একমাত্র পথ পরমাণু অস্ত্রের কাঁচামাল ইউরেনিয়াম আমদানির অনুমতি পাওয়ার জন্য! এতদিনে হয়তো পরামানু বোমা অধিকারী হতো।বাংলাদেশ ,
BRICS এর সদস্য হয়ে যেতো!

বাঙালি চরিত্র বিশ্লেষনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ মরার আগে বলেছিলেন, “যদি পূনঃ জনম থেকে থাকে, “আমাকে আর বাঙালি করে পৃথিবীতে পাঠিও না!” তার আগেও তিনি বলেছেন, “, সাড়ে সাত কোটি বাংগালী কে হে বঙ্গ জননী, রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি!” এদেশের অশিক্ষিত লোকগুলো সৎ কিন্তু শিক্ষিত মানুষ গুলো চোর, অহংকারী, স্বার্থপর, ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং শিক্ষিতরা মুর্খ!

আমার বক্তৃতা এখানে শেষ করছি। তার আগে এমন একটা বিষয় আলোচনায় আনার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি উদীয়মান বাংলাদেশ কে । বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠান গুলো যদি এভাবে আলোচনা ও প্রতিবাদ করে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসে তাহলে সুন্দর একটি দেশ ও জাতি আমরা গঠন করতে পারি।দল নয় হিংসা নয় সবার শান্তি প্রতিষ্ঠা করি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা প্রার্থী।

আল্লাহ হাফেজ
নমস্কার সবাইকে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102