মোঃ রায়হান পারভেজ নয়ন
স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী
জ্ঞান, নৈতিকতা ও আলোকিত চেতনার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মানুষই সমাজ ও জাতির প্রকৃত সম্পদ এই দর্শনকে ধারণ করে নীলফামারীর ডিমলা কামিল মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছে নবীনবরণ ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ২০২৫।
স্মৃতির সাথে মূল্যের যাত্রা, দীপ্তির সাথে জ্ঞানের খোঁজে এই অর্থবহ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় মাদরাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয় দিনব্যাপী এই বর্ণিল অনুষ্ঠান।
মাদরাসা প্রাঙ্গণ জুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ, ব্যানার-ফেস্টুনে সজ্জিত প্রবেশপথ, নবীনদের জন্য ফুলেল অভ্যর্থনা ও কৃতী শিক্ষার্থীদের মুখে সাফল্যের হাসি সব মিলিয়ে শিক্ষাঙ্গন পরিণত হয় এক আনন্দোৎসবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-এর মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শামছুল আলম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব জ্যোতির্ময় বিকাশ চন্দ্র, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোঃ ইমরানুজ্জামান, এবং ডিমলা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জনাব মোঃ ফজলে এলাহী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিমলা কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সহসভাপতি, সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
প্রথম পর্বে নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। পরে গত শিক্ষাবর্ষে বোর্ড ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে সম্মাননা সনদ, ক্রেস্ট ও উপহার তুলে দেন অতিথিরা।
সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে অনেকে বক্তব্য রাখেন এবং শিক্ষাজীবনে অনুপ্রেরণা জোগানো শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন,
শিক্ষা শুধু তথ্য অর্জনের মাধ্যম নয়, এটি নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ গঠনের এক নিরন্তর সাধনা। জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মানুষের মতো মানুষ হওয়াই শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য।”
প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. মোঃ শামছুল আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন,
ডিমলা কামিল মাদরাসা বহুদিন ধরে এ অঞ্চলে ইসলামি শিক্ষা ও মানবিকতার আলো ছড়িয়ে আসছে। আমি আশা করি, এখানকার শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইতিবাচক অবদান রাখবে।
তিনি আরও ঘোষণা দেন, ডিমলা কামিল মাদরাসায় কামিল পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হবে, যা উপস্থিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ ও উৎসাহের সঞ্চার ঘটায়।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন,
বর্তমান যুগে নৈতিকতা ও মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষা সবচেয়ে জরুরি। মাদরাসা শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান, সততা ও মানবিকতার সমন্বয়ে একটি সুন্দর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে ক্বিরাত, হামদ-নাত, আবৃত্তি ও ইসলামী সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রতিভা তুলে ধরেন।
পরে অনুষ্ঠিত হয় দোয়া ও মোনাজাত, যেখানে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং মাদরাসার অগ্রগতি কামনা করা হয়।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান ডিমলা কামিল মাদরাসাকে পরিণত করে এক প্রাণবন্ত মিলনমেলায়। নবীনদের উৎসাহ, সিনিয়রদের সাফল্যের অনুপ্রেরণা এবং শিক্ষকদের স্নেহ ও দিকনির্দেশনায় দিনটি হয়ে ওঠে স্মরণীয় ও আনন্দময় দিন।