
মোঃ রায়হান পারভেজ নয়ন
স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী
নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের কাউয়া ধনীপাড়া গ্রামে শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে এক অনন্য মানবিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ঘটনার সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের মাননীয় রাষ্ট্রদূত মি. মানচুর জাভুসি ও তাঁর সহধর্মিণী মিসেস জাহারা জাভুসি সফরসঙ্গীসহ আগমন করেন ডিমলার এই গ্রামে অবস্থিত জুলাই যোদ্ধা মোঃ আতিকুজ্জামান আতিকের বাড়িতে।
রাষ্ট্রদূত দম্পতি সকালে তিস্তা ব্যারেজ (ডালিয়া ব্রিজ) এলাকা পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সংস্কৃতি, মানুষের জীবনধারা ও গ্রামীণ ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেই ধারাবাহিকতায় তাঁরা জুলাই যোদ্ধা আতিকুজ্জামান আতিকের বাসভবনে সৌজন্য সফর করেন।
বাড়িতে পৌঁছে রাষ্ট্রদূত দম্পতিকে স্বাগত জানান আতিকের পিতা মোঃ লেবু মিয়া, মা, বোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। তাঁদের আন্তরিক অভ্যর্থনা, নিখাদ ভালোবাসা ও গ্রামীণ আতিথেয়তা রাষ্ট্রদূত দম্পতিকে গভীরভাবে মুগ্ধ করে।
রাষ্ট্রদূত মানচুর জাভুসি বলেন
বাংলাদেশ আমার হৃদয়ের দেশ। এখানকার মানুষ অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ, ভদ্র এবং পরিশ্রমী। এই গ্রামের মানুষ, প্রকৃতি ও অতিথিয়তা আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি আজ এখানে এসে এক অবর্ণনীয় শান্তি অনুভব করছি
তিনি আরও বলেন
জুলাই যোদ্ধা মোঃ আতিকুজ্জামান আতিক একজন অসাধারণ মানুষ। তাঁর বিনয়, শালীনতা ও দেশপ্রেমে আমি সত্যিই মুগ্ধ। তাঁর পরিবারের সবাই খুব আন্তরিক ও অতিথিপরায়ণ। আমি তাঁদের জন্য দোয়া করি, ইনশাআল্লাহ আতিক একদিন দেশের জন্য আরও বড় কিছু করবেন।
রাষ্ট্রদূতের এই সফরের খবর দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নীলফামারী জেলা আমির অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার, উপজেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক কাজী হাবিবুর রহমান, ও উপজেলা সেক্রেটারি মোঃ কাজী রোকনুজ্জামান বকুল। তাঁরা ফুলের তোড়া দিয়ে রাষ্ট্রদূত দম্পতিকে বরণ করেন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এ সময় জেলা আমির অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন
জুলাই যোদ্ধা মোঃ আতিকুজ্জামান আতিক আমাদের ডিমলা উপজেলার গর্ব। তাঁর মতো একজন দেশপ্রেমিক, বিনয়ী ও সমাজসেবী মানুষের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমাদের জন্য এক বিশাল সম্মানের বিষয়। আজকের এই সফর কেবল আতিকের নয়, সমগ্র ডিমলার জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন।
রাষ্ট্রদূতের সফর উপলক্ষে এলাকার সাধারণ মানুষ ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। গ্রামের প্রবীণ থেকে তরুণ সবাই রাষ্ট্রদূত দম্পতিকে দেখার জন্য ছুটে আসেন আতিকের বাড়ির সামনে। স্থানীয়রা জানান, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূত এই প্রথমবারের মতো তাঁদের গ্রামে এসেছেন।
গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন,
আমাদের গ্রামে কখনো কোনো বিদেশি প্রতিনিধি আসেননি। আজ ইরানের রাষ্ট্রদূত এসে আমাদের সবার হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার তুলেছেন। এটা আমাদের গ্রামের জন্য গর্বের মুহূর্ত।
জুলাই যোদ্ধা আতিকুজ্জামান আতিকও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন,
রাষ্ট্রদূত মানচুর জাভুসি ও তাঁর সহধর্মিণীর এই সফর আমার জীবনের এক স্মরণীয় ঘটনা। তাঁদের ভালোবাসা ও আন্তরিকতা আমাকে নতুন করে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ, তিনি আমার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন এবং আমাদের গ্রামের সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি উপভোগ করেছেন।
উল্লেখ্য, জুলাই যোদ্ধা মোঃ আতিকুজ্জামান আতিক দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবা, মানবিক সহায়তা, শিক্ষাবিকাশ ও স্থানীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন। তাঁর সততা, বিনয় ও দেশপ্রেম ইতিমধ্যে এলাকায় তাঁকে একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ইরানের রাষ্ট্রদূতের এই সৌজন্য সফর কেবল আতিকের প্রতি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা নয়—বরং দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব, সংস্কৃতি বিনিময় এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্রদূত দম্পতি বিদায়ের সময় বলেন
বাংলাদেশের এই মাটিতে, এই মানুষের মাঝে যে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা, তা সত্যিই প্রশংসনীয় আর মোঃ আতিকুজ্জামান আতিক তার অনন্য দৃষ্টান্ত।