রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া প্রেসক্লাব এর অফিস উদ্বোধন মাটি – মা প্রফেসর ডক্টর সন্দীপক মল্লিক সাহিত্য রসগ্রহণ অনুষ্ঠানে নতুনতারা’র প্রতিষ্ঠাতা সংবর্ধিত সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি দ্বীপশিখা পদক পেলেন জগন্নাথপুরের কৃতি সন্তান শাহিনুর রহমান কারো কাছে নিজের সমস্যা বলার আগেই ভাবুন গঙ্গা–পদ্মার ন্যায্য হিস্যা দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশাল গণসমাবেশ হাওরাঞ্চলের উন্নয়নে ধানের শীষে ভোট চান আনিসুল হক ট্রাভেল এজেন্সির প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ-২০২৫ বাতিলের দাবি, আটাব, বায়রা ও হাবের মানসিক চাপদাতা: জীবন্ত লাশ বানানোর ভয়ঙ্কর হত্যাকারী সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে জনগণের আমানতের খেয়ানত হবেনা- এডভোকেট ইয়াসীন খান সিডর আঘাতের ১৮ বছর, ভেড়িবাঁধের অভাবে আজও দুর্ভোগে, ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ও বেড়িবাঁধের দাবি

রাগের সংজ্ঞা:

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪০ Time View

আলো ডেস্ক:

অন্যের অন্যায়ের শাস্তি নিজেকে দেওয়া। অন্যের বোঝা নিজের কাঁধে নিয়ে নিজেকে কষ্ট দেওয়া।

রাগের আলোচনা:

রাগ নিজে থেকে উঠে না। রাগকে দাওয়াত দিয়ে আনা হয়। রাগ একটি মারাত্মক রোগ। এর কারণে পরস্পর সম্পর্ক নষ্ট হয়। রাসুল ﷺ বলেছেন: لَا تَغْضَبْ তোমরা রাগ করো না। [সহিহ বুখারি: হাদিস নং ৬১১৬]

রাগের প্রকারভেদ:

রাগ বা গোস্বার রোগী চার ধরণের হয়। যথা-

১. রাগ দ্রুত আসে, দ্রুত যায়।
২. রাগ দেরিতে আসে, দেরিতে যায়।
৩. রাগ দ্রুত আসে, দেরিতে যায়। (এই রাগ খুব খারাপ)
৪. রাগ দেরিতে আসে, দ্রুত যায়। (এই রাগ ভাল)
এর মধ্যে উত্তম হচ্ছে ৪ নং রাগের রোগী। আর সবচেয়ে ভয়াবহ হলো ৩ নং রাগের রোগী। যেমন: একজন অসুস্থ ব্যক্তি। একজন ফার্মেসীর ওষুধ সেবনে ভালো হয়ে যায়। অন্যজন বড় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনে ভালো হয়। আর অন্যজন বড় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশন করতে হয়।
রাসুল ﷺ ছিলেন একেবারেই কোমল হৃদয়ের অধিকারী। অন্যথায় আমাদের কেউ যদি একটু রাগী মেজাযের হয়, তাহলে আমরা গর্ব করে বলি হজরত জালালী তবিয়তের মানুষ।
রাগের ক্ষতিকর দিকসমূহ
রাগের ক্ষতি ৩ প্রকার। যথা- ১. শারীরিক ক্ষতি। ২. মানসিক ক্ষতি। ৩. সামাজিক ক্ষতি।

রাগের শারীরিক ক্ষতিসমূহ

১. উচ্চ রক্তচাপ বা হাই-প্রেশার বৃদ্ধি পায়। (এদের ব্রেনষ্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা ৮৭% বেড়ে যায়)।
২. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পায়।
৩. লিভার ফাংশান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৪. ধাতুক্ষয় রোগ সৃষ্টি হয়।
৫. প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
৬. মহিলাদের লিকুরিয়া বা সাদাস্রাব হয়।
৭. কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি হয়।
৮. চেহারার লাবণ্যতা নষ্ট হয়ে যায়।
৯. হার্ট এট্যাক ও ব্রেন ষ্ট্রোক হয়।

রাগের মানসিক ক্ষতিসমূহ

১. স্মৃতিশক্তি লোপ পায়।
২. ডিপ্রেশন বা হতাশা বেড়ে যায়।
৩. ব্রেনের মেলাটনিন কমে যায়। যার কারণে মেজায রুক্ষ হয়ে যায়।
৪. অমনযোগীতা বৃদ্ধি করে।
৫. অহংকারী বানিয়ে দেয়।

রাগের সামাজিক ক্ষতিসমূহ

১. মর্যাদাহানী হয়।
২. অবস্থান বা ব্যক্তিত্বের অবনতি ঘটে।
৩. পরিবারে কিংবা কর্মস্থলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
৪. মানুষ তাকে পরিত্যাগ করে।

রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়

১. রাগের উৎস খোজে বের করা।
২. রাগের ক্ষতিসমূহ চিন্তা করা।
৩. যার উপর রাগ উঠেছে তাকে বুঝিয়ে বলার কথা মাথায় আনা।
৪. কিছু সময় হেটে আসা।
৫. দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেওয়া (লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে সেটাকে ছেড়ে দেওয়া)।
৬. সর্বদা নিজের মুহাসাবা করা।
৬. ১০ থেকে ১ পর্যন্ত উল্টো ঘণনা শুরু করা। যেমন: ১০, ৯, ৮, ৭, ৬, ৫, ৪, ৩, ২, ১

পাঁচটি জিনিস ব্রেনের গতি কমিয়ে দেয়। যথা-
১. রাগ
২. সর্বদা অভিযোগ করা।
৩. মানুষকে দোষারূপ করা।
৪. অমনযোগিতা।
৫. অহংকার।
দুটি বস্তুর মাধ্যমে ব্রেন সর্বদা সতেজ থাকে। যথা-
১. সর্বদা আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা। اَلْحَمْدُ للهِ عَلٰى كُلِّ حَال আলহামদুলিল্লাহি আলা কুল্লিা হাল।
২. সর্বদা নিজের মুহাসাবা করা।

মুহাসাবা বা আত্মপর্যালোচনা

আমাদের ৭টি বিষয়ে মুহাসাবা বা আত্মপর্যালোচনা করলে ইন শা’ আল্লাহ রাগ কমে যাবে এবং ব্রেন সতেজ থাকবে। আর সেগুলো হল-
১. দৈনিক কতবার রাগ করেছি।
২. দৈনন্দিন কাজে কতবার তাড়াহুরা করেছি। (তাড়াহুরা করার দ্বারা জীবনে সফলতা আসে না)।
৩. দৈনিক কতবার অতি সংবেদনশীল বা ইগোপ্রবণ হয়েছি। (আর বিপরীত বিষয় হলো সহনশীলতা)।
৪. দৈনিক কতবার অপচয় করেছি। [জেনে রাখা উচিত- শুধুমাত্র অর্থের অপচয়ই অপচয় নয় বরং কথা, সময় এনার্জি ইত্যাদি সকল বিষয়েরই অপচয় রয়েছে]।
৫. দৈনিক কতবার চিন্তা-ভাবনা করা ছাড়াই কথার উত্তর দিয়েছি।
৬. দৈনিক কতবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলেছি।
৭. দৈনিক কতবার নৈরাশ্যতা এসেছে।
উপরোক্ত ৭টি বিষয় নিয়মিত একাধারে ২১ দিন মুহাসাবা করে চললে তা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।

রাগের চিকিৎসা

রাগের চিকিৎসা দুই ধরণের হয়। যথা-
১. দৈহিক বা শারীরিক। ২. মানসিক বা আত্মিক।

রাগের দৈহিক বা শারীরিক চিকিৎসা ৩টি। যথা-

১. অবস্থার পরিবর্তন করা। অর্থাৎ দাড়ানো থাকলে বসে যাওয়া। বসে থাকলে শুয়ে যাওয়া। শুয়ে থাকলে দাড়িয়ে যাওয়া।
মানুষের রাগের সময় তার রক্তচাপ বেড়ে যায়। এই রক্তচাপ কমাতে পারলে রাগও আস্তে-আস্তে কমে যায়। দাড়ানো অবস্থায় মানুষের রক্ত সঞ্চালন খুব দ্রুত হয়। আর রাগ বাড়তে থাকে। দাড়ানো থেকে বসলে মানুষের শরীরে ৩টি ভাঁজ পড়ে। যার ফলে রক্তসঞ্চালনের দ্রুততা কমে আসে, তাই রাগও কমে আসে। (দাড়ানো অবস্থায় রক্ত সঞ্চালন পা থেকে মাথার দিকে যায়)।
২. অবস্থানের পরিবর্তন করা। অর্থাৎ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যাবে বা এক রুম থেকে অন্য রুমে চলে যাবে।
৩. অজু বা গোসল করা। কেননা রাগের কারণে মানুষের শরীর গরম হয়ে যায়। আর অজু বা গোসলের দ্বারা মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠান্ডা হয়। তাই শরীরের রক্তের উত্তপ্ততাও কমে আসে। যার ফলে রাগও কমে যায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ الْغَضَبَ مِنَ الشَّيْطَانِ، وَإِنَّ الشَّيْطَانَ خُلِقَ مِنَ النَّارِ، وَإِنَّمَا تُطْفَأُ النَّارُ بِالْمَاءِ، فَإِذَا غَضِبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَتَوَضَّأْ
শয়তানের কারণে রাগের সৃষ্টি হয়, আর শয়তানকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পানি দ্বারাই আগুন নির্বাপিত হয়। কাজেই তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয়, তখন সে যেন অজু করে। [সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নং ৪৭৮৪]
রাগের মানসিক বা আত্মিক চিকিৎসা হল দুটি। যথা-
১. সর্বপ্রথম- أَعُوْذُ بِاللهِ পড়া। কেননা হাদিস শরিফে এসেছে- إِنَّ الْغَضَبُ مِنَ الشَّيْطَانِ অর্থাৎ রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে।[সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নং ৪৭৮৪]
২. দুরদ শরিফ পড়া। কেননা দুরদ শরিফ পড়ার দ্বারা আল্লাহ তাআলার রহমত নাজিল হয়।
আর Pscychology বা মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটা হলো অদৃশ্য আগুনকে অদৃশ্য পানি দ্বারা নেভানোর নামান্তর।

শরিয়াতের দৃষ্টিকোনে রাগ

শরিয়াতের দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি রাগকে Control বা নিয়ন্ত্রন করতে পারে, তার জন্য রাগ বৈধ, অন্যথায় রাগ বৈধ নয়।
✪ ☞ শরিয়াতের বিধান হল রাগকে Control বা নিয়ন্ত্রন করা।
✪ ☞ আর শরিয়াতের মানসা হল রাগকে রূপান্তর করা।
রাগ হলো মূলত একটি পাগলামি।
এজন্য যে ব্যক্তি কম রাগী সে অল্প পাগল।
আর যে ব্যক্তি মধ্যম রাগী সে মধ্যম।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102