শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

ঐতিহ্য সুন্দরবনে  জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকিতে  বিদেশি তহবিলের অত্যন্ত প্রয়োজন

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৫১ Time View
এস.এম.  সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে:
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাতবিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলের বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু ও আবহাওয়ার পরিবর্তন বিষয়টি সমগ্র বিশ্বে একটি স্বীকৃত সত্য। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা পত্রে বৈশ্বিক তাপমাত্রার যে রেখাচিত্র আমরা দেখতে পাই, সে অনুযায়ী গত ১০০-১৫০ বছরে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রীর কাছাকাছি।
এখন ভয় হচ্ছে এই তাপমাত্রা এক ডিগ্রী থেকে বেড়ে চার-পাঁচ ডিগ্রীতে চলে যেতে পারে, যদি না বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া না হয়। আর এই ভয়ের কারণ হচ্ছে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়া আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে যাবে,অনিশ্চয়তা বাড়বে ।
এই লক্ষ্যে ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে তাপমাত্রা কোন অবস্থাতেই দুই ডিগ্রীর বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না।
২০১৭ সালে উত্তর আমেরিকাতে প্রচন্ড শীত লক্ষ্য করা গেছে। ক্যানাডা কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর অংশে মাইনাস ২৫-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এরও বেশি নিম্নাংকের তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয়েছে। যেটা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। অন্যদিকে অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে দেখা গেছে প্রচন্ড গরম।
এতটাই গরম যে সেখানে তাপ বাড়ার কারণে বনের গাছে গাছে আগুন লেগে গেছে। গত বছর টেক্সাসেও এটা হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়াতেও প্রায়ই হচ্ছে। অর্থ্যাৎ গড় তাপমাত্রাটি বাড়ছে। কিন্তু আবহাওয়ার যে তীব্র অংশ রয়েছে সেগুলো পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে হাইড্রোলোজি সাইকেল-এ, আমরা যেটাকে পানিচক্র বলি। তাপমাত্রা বড়ার কারণে বাষ্পায়ন বাড়বে। বাষ্পায়ন বাড়লে বৃষ্টিপাত বাড়বে।
শুধু এ টুকু হলে ভয় ছিল না। ভয়টা হচ্ছে বৃষ্টিপাতের বর্তমান প্রচলিত ধারাতে মারাত্মক পরিবর্তনের বিষয়টি। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা তখন হবে না, যখন হওয়ার কথা নয় তখন হবে। আমরা জানি আষাঢ়-শ্রাবণে বৃষ্টি হয়। জৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে বৃষ্টি শুরু হতে পারে।
কিন্তু ২০১৭ সালে আমরা দেখেছি চৈত্র মাসের বৃষ্টি আষাঢ় মাসের মত রূপ ধারণ করেছে। একই সাথে আমরা অক্টোবর নভেম্বর মাসে বৃষ্টি হতে দেখেছি। ফলাফল হাওর অঞ্চলে প্রচন্ড বন্যা। বন্যার কারণ সরকারী হিসেবে বাধ টপকে পানি ঢুকেছে।
বেসরকারী হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি ছিল । মূল কথা হচ্ছে, মার্চ মাসের বৃষ্টির কারণে নদীর পানির যে উচ্চতা হয়েছে সেটা এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে সাধারণত নদীর পানির যে স্তর থাকে সেটার তুলনায় তা ছিল অস্বাভাবিক। একইভাবে আমরা অক্টোবর নভেম্বর মাসে বৃষ্টি হতে দেখেছি।
অক্টোবর নভেম্বর মাসে বৃষ্টির কারণে পানির চাপে দেশের বহু নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। চৈত্র-বৈশাখ মাসের বৃষ্টির কারণে বোরো ধান যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি অগ্রহায়ন-কার্তিকের বৃষ্টির কারণে আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হঠাৎ করে এ ধরণের অস্বাভাবিক মাত্রার বৃষ্টির কারণে পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি ধস হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বাড়ছে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে, বর্জ্রপাতের পরিমাণ বাড়ছে, নদী ভাঙনের মাত্রা বাড়ছে। জলবায়ুর এ পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনে এবং জীবিকার ওপরে। জীবিকার ওপর প্রভাব পড়লে এবং খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিলে মানুষ দেশান্তরি হবে।
জানুয়ারী মাস শেষ হতে চলল, কিন্তু এখনও সিলেটের হাওরাঞ্চলের পানি কমেনি। এ সময় হাওরে বিলগুলোতেই শুধু পানি থাকে, বাকি অন্যান্য জায়গাগুলো শুকিয়ে যায় এবং সেগুলো কৃষি কাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর তা হয়নি। তার কারণ সিলেট অঞ্চলের পানি চাদপুরের মেঘনা দিয়ে যে নামবে, তা নামতে পারছে না। কারণ চাদপুর অঞ্চলের পানির লেভেল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল লবনাক্ত হয়েছে। সাতক্ষিরা, খুলনা , বাগেরহাট, বরগুনা প্রচন্ড লবনাক্ত হয়েছে এবং এই লবনাক্ততার সীমা ক্রমান্বয়ে উত্তরাঞ্চলের দিকে ধাবিত হচ্ছে। খাবার পানির লবনাক্ততা বাড়ছে। সাতক্ষিরাতে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে । ফলে মানুষ পানি কিনে খাচ্ছে।
১৯৯২ সালে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে যখন আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তখন পৃথিবীর ৩টি লক্ষমাত্রা ছিল । প্রথমত জীব বৈচিত্র্যের পরিবর্তন ঠেকানো, দ্বিতীয়ত খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করা এবং তৃতীয়ত টেকসই উন্নয়ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
২০১৫ সালে এসে পৃথিবীর মাথা ব্যথার কারণ তীব্র খাদ্যাভাব নিয়ে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, উষ্ণায়নের কারণে অচিরেই পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দিবে।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা আড়াই থেকে তিন ডিগ্রীর ওপরে চলে গেলে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকাতে খাদ্য শস্যের ফলন মারাত্মকভাবে ব্যহত হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতির কারণেও খাদ্যাভাব দেখা দিবে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানী করেছে।
মায়ানমারের সাথে এত অশান্তি হওয়া সত্বেও সেখান থেকে চাল আমদানী করতে হয়েছে। ভারতে চালের দাম বেড়ে গেছে, কারণ বাংলাদেশ ভারত থেকে চাল কিনছে। অর্থ্যাৎ যে কোন রাজনৈতিক সরকার সঠিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক।
কাগজে পড়েছি যে, কিছুদিনের মধ্যেই নাকি ১০ কেজি দরে চাল বিক্রি হতে পারে। অর্থ্যাৎ ভর্তুকি দিয়ে হলেও রাষ্ট্র অতি দরিদ্রদের মাঝে কম দামে চাল বিতরণ করবে। আমাদের তাতে আপত্তি নেই। আমাদের একটিই কথা, সরাকারের ভর্তুকি দেয়া খাদ্য যেন প্রকৃত দুস্থদের মাঝে পৌছে। এটা যেন রাজনীতির দোলচক্রে ক্ষমতাশালীদের হাতে নিয়ন্ত্রণটি চলে না যায়।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের করণীয় কি, সেটা নিয়ে আলোচনা করছি। ১৬ বছর আগে তখন২০০৯ সালে বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতায় আসে এই বিষয়ে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট জেঞ্জ স্ট্র্যাটেজিক এন্ড একশন প্লান ২০০৯’ নামে যে দলিল অনুমোদন করে, ওই সময়ে পৃথিবীর কোন দেশে ওই পরিমাণ প্রস্তুতি ছিল না।
বাংলাদেশ ২০০৯ এ বলতে পেরেছে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের কি করা উচিৎ বিশ্বের কি করা উচিৎ। কিন্তু দু:খের বিষয় এই যে, এর পর প্রায় ১৬বছর পার হয়ে গেল এ ব্যাপারে বাংলাদেশের খুব একটা অগ্রগতি হয়নি।
বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকবেলা করার জন্যে অর্থায়নের কথা বলা হচ্ছে, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর জন্যে গ্রীন হাউস গ্যাস উৎপাদন বন্ধের জন্যে প্রস্তাব রাখা হচ্ছে এবং উন্নয়শীল দেশ গুলোকে তাদের এডাপটেশন বা অভিযোজন প্রশমনের জন্যে প্রচুর অর্থায়নের কথা বলা হচ্ছে এবং তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
আমরা দু;খিত যে বাংলাদেশ সরকার এই ব্যাপারে খুব একটা এগুতে পারছে না। এই না পারার কারণ হিসেবে প্রধানত প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাকে চিহ্নিত করতে চাই । জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে দায়িত্বটা কার ? উত্তর হচ্ছে সকলের। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য ঘাটটি দেখা দেবে এবং এর জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়, পানি মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি গবেষণাগার দায়িত্ব নিবে।
অবকাঠামো ভেঙে গেলে স্থানীয় সরকার দায়িত্ব নেবে। রোগ বালাই বাড়তে পারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নেবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়লে, দুর্যোগ মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নেবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে মহিলা ও শিশুরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এ ব্যাপারে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণায়ল দায়িত্ব নেবে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পায়ন প্রয়োজন। কিন্তু শিল্পায়ন থেকে যেন কার্বন গ্যাস নির্গত কম হয় সে ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নেবে।
বিশ্বের দরবারে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথাবার্তা বলার জন্য নির্বাচিত মন্ত্রণালয় হচ্ছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। এ কাজটি তারা ভালভাবে করে থাকেন বলে আমারা লক্ষ্য করছি। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন মন্ডল থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে ।
এ কাজটি করার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় অত্যন্ত আগ্রহী ছিল । সরকার এ দায়িত্বটি দিয়েছেন ইআরডি (এক্সটার্নাল রিলেশন ডেভেলপমেন্ট) কে। এ ব্যাপারে ইআরডিতে কতটা দক্ষ জনশক্তি আছে এটা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে। তবে আমরা সম্প্রতি লক্ষ করছি তারা খোলা মন নিয়ে সাহায্য গ্রহণ করার জন্য বিশ্বে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
তার দেশীয় ও বিদেশী বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ফান্ড সংগ্রহের জন্য উদ্যোগি ভূমিকা পালন করছে। তাদের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই দুটো সংস্থাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। একটি হচ্ছে পিকেএসএফ আরেকটি হচ্ছে পিটকফ।
যারা বিভিন্ন সংস্থার আবেদন পত্রগুলো প্রসেস করে বিশ্বের সংশ্লিষ্ট জায়গাতে প্রেরণ করে থাকে। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যে বিশ্ব থেকে যারা অর্থায়ন করবেন তাদের আবার কতগুলো শর্ত আছে। আমি ৭টি শব্দের মাধ্যমে এ শর্তগুলো প্রকাশ করতে চাই।
প্রথম শর্ত হচ্ছে, টাকা খরচের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। দুই. সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। আমাদের দেশে সক্রিয় পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এই সচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।
তিন. অংশিদারিত্ব, অর্থ্যাৎ ওই প্রকল্পতে যারা সংশ্লিষ্ট, অর্থ্যাৎ উপকারভোগীই হন বা ক্ষতিগ্রস্তই হন, সকলকে নিয়ে প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবে। এ কাজটি আমরা দেখি না।
আমরা যেটা দেখি সেটা হচ্ছে, সরকারী আমলারা কিংবা তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা বা প্রকৌশলীরা প্রকল্প হাতে নিচ্ছেন , কিন্তু সেখানে স্থানীয় জনগণের কোন ভূমিকা থাকছে না।
আমি মনে করি এই কাজে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন ও সদস্যদের ভূমিকা ওই এলাকার এমপির থেকে বেশি হওয়া উচিৎ। অর্থ্যাৎ স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে হবে। চতুর্থ শর্ত হচ্ছে , পার্টনারশিপ। সেটা প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ বলতে পারেন, গভর্ণমেন্ট ননগভর্ণমেন্ট পার্টনারশিপ বলতে পারেন।
সারা বিশ্বেই লক্ষ্য করা গেছে প্রাইভেট সেক্টর সবচেয়ে বেশি এফিসিয়েন্ট ওয়েতে কাজ করে। আমরা যদি প্রকল্প বাস্তবায়নে এফিসিয়েন্সি চাই, সঠিক বাস্তবায়ন চাই তাহলে এ ধরনের পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে হবে।
বাকি তিনটি পয়েন্ট হচ্ছে, প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন হয়ে গেলে তারপরে কিছু শর্ত পালন করতে হবে । শর্ত গুলো হচ্ছে, মেজারেবল, রিপোর্টেবল এবং ভেরিফায়ারেবল। অর্থ্যৎ কাজের যে ইমপ্লিমেন্টেশন হবে সেটা যাতে পরিমাপযোগ্য হয়, প্রতিবেদন মূলক হয় এবং ওই কাজটি যেন বিশেষজ্ঞরা এসে ভেরিফাই করার মতো হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনে অর্থায়নের পরিমাণটি কত হতে পারে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পৃথিবীতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ২০০৮ সনে প্রথম এবং ২০০৯ সন থেকে প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে একটি ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে সরকার অনুদান দিচ্ছে।
ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে এটাকে আলাদা করা হচ্ছে। অর্থ্যাৎ জলবায়ু পরিবর্তন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর অতিরিক্ত হিসেবে করা হচ্ছে। উন্নয়ন কর্মসূচীর সাথে মিলিয়ে আমরা এ কাজ করতে পারি।
কিন্তু আমাদের এটা দেখাতে হবে যে এটা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কতটা কার্যকর হচ্ছে। এর জন্য প্রতিবছর ১০০ মিলিয়ন ডলার মানে ৭ হাজার কোটি টাকা করে অনেক টাকা জমা হয়েছে। পার্লামেন্টে বিল পাশ করে তার মাধ্যমে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হচ্ছে। বিশ্ব এটাকে আগ্রহের সাথে লক্ষ্য করেছে। বিশ্বের যে নতুন ট্রাস্ট ফান্ড রয়েছে যার নাম হচ্ছে গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড।
এ ফান্ড তৈরির সময় আমাদের ট্রাস্ট ফান্ড কিভাকে কাজ করছে সেটা বিশ্ব বুঝে গেছে। তবে আমাদের এই ট্রাস্ট ফান্ড প্রকল্পে জবাবদিহিতা আছে স্বচ্ছতা আছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন পড়লে মনে হয় নেই। এখন সময় এসেছে আমরা যেন আমাদের কর্ম পন্থা সংশোধন করে সামনে এগিয়ে যাই।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ও প্রশমনে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে। এই উন্নত প্রযুক্তির জন্য ফান্ডস আছে। সম্প্রতি দেখতে পেলাম, জাকার্তা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিশ্বের কাছ থেকে টেকনোলজি চেয়েছে এবং তারা মডেল করে দিয়েছে।
আমরা কিন্তু এ ব্যাপারে অনেক এগিয়ে আছি। কারণ ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আমাদের মডেল করা আছে। আমাদের এখন নজর দিতে হবে বিভিন্ন জেলা শহরগুলো দিকে।
আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে, জলবায়ু পরির্তনকে মোকাবেলা করতে পারে এই ধরনের প্রজাতির ফসল উদ্ভাবন করতে হবে।
বাংলাদেশ কাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফন্ডের টাকা দিয়ে এ বিষয়ে যথেষ্ট গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু বৈশ্বিক মহল থেকে আমরা যে সাহায্য পেতে পারতাম সেটা গ্রহণ করার মত কোন চেষ্টা আমরা দেখছি না।
বিশ্বের হিসেবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশে দক্ষতার অভাব আছে। আমাদের দেশে নতুনভাবে কিছু করতে গেলে মহা বিপদ। কারণ নতুনভাবে করা কাজটি যদি ফেল করে তাহলে অনেকেরই অসুবিধা হতে পারে। যে কারণে কেউ ঝুকি নিয়ে নতুন কাজ করতে চান না।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশে ইতোমধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে জলবায়ু তথা আবহাওয়া আরো অস্থির হবে, বৃষ্টিপাত উল্টোপাল্টা হবে, বর্জ্য বিদ্যুৎ বাড়বে কুয়াশা বাড়বে, নদী ভাঙন, ঘূর্ণিঝড় বাড়বে, বন্যা জলাবদ্ধতা বাড়বে, খড়া বাড়বে। এ
র জন্য মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতির কাজ হাতে নিতে হবে। সকলকে সমন্বিত পর্যায়ে এগিয়ে আসতে হবে। এই অপেক্ষায় আছি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102