
লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম
মানব জীবনে নারী-পুরুষ বন্ধনের সংসার অপরিহার্য! এমন ই সৃষ্টির বিধান! কিন্তু ভাঙন রোধের পথ কি? সংসার জীবনে যে সহনশীলতা ধৈর্য সহ্য চাহিদা আঘাত প্রতিঘাত সব কিছু বহন ক্ষমতা যখন এক পক্ষ হারিয়ে ফেলে তখনই ভাঙন ধরে! কখনও একই ছাদের নিচে থেকে-ও সম্পর্ক থাকে না কখনও একই আকাশের নিচে থেকে ও সম্পর্ক থাকে! খুব আনন্দ ফূর্তি তে থাকা সুখী দম্পতি পাওয়া বেশ মাইক্রোস্কোপিক সংখ্যা ! যারা জোড়াতালি দিয়ে আছেন তারা মানইজ্জত সন্মান রেখে চলতে চান বলে আছেন, কেউ সুযোগের অভাব, কেউ আর্থিক অসচ্ছলতা ইত্যাদি!
এসব ছাড়া-ও কিছু লোক ভালোবাসার টানে হৃদয়ের মায়ায় থেকে যান! এমন কি পাগলের মত আচরণ যে কোনপক্ষের মেনে দ্বিতীয় পক্ষ থেকে যান! ভালোবাসার বিয়ে এবং অফিসিয়াল বিয়ে দু’টোই ভাঙে! ভালোবাসার সংসার ভাঙে সমঅধিকার পেয়ে কোন এক পক্ষের অত্যাচার অপমান বেড়ে যায়, সমঝোতা করেও হালে পানি না পেয়ে ভেঙে যায়, আর এ্যারেঞ্জ ম্যারিজ সম্পর্ক টা দারুন দাপ্তরিক, তা ভাঙ্গার সম্ভাবনা হৃদয় ক্ষত সৃষ্টি না ও করতে পারে। তবে ভালোবাসার বিয়ের একটা রক্তক্ষরণ আজীবন চলয়মান থাকে! তবে একে অপরের প্রতি মায়া, সন্মান, সুখদুঃখ ভাগাভাগি প্রয়োজন সংযুক্ত থাকতে হলে! কিছু সংসারে অশান্তি টেনশন নিজের তৈরি, অপরিকল্পিত সন্তান উৎপাদন! জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সন্তান সংরক্ষণ শিক্ষাদীক্ষা বিয়ে ভাত-কাপড়ের জোগার সে টেনশন কাটে না কবর অবধি!
সংসার জীবনের টানাপোড়েন সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব বা পঞ্চাশোর্ধ বেশী প্রভাব ফেলে!
প্রিয় পাঠক, আমার বিষয় অপরিপূর্ণ ভালবাসা বিশেষ করে কবি সাহিত্যিক শিল্পী জীবনে! যে-সব প্রেম সংসার পর্যন্ত গড়ায় না তাদের অতৃপ্ত আহাজারি! কবি জীবনানন্দ ও পত্নী লাবন্য এক বিষদময় দম্পতি! এ-যুগের কবি “হেলাল হাফিজ” ভালোবাসার জনকে না পেয়ে চির কুমার থাকলেন এবং একাকিত্ব জীবন কাটিয়ে দুনিয়া ছাড়লেন! কবি রুদ্র তসলিমা দম্পতি কে ছাড়াছাড়ি হতে হলো, হুমায়ুন ফরিদি সুবর্ণা সংসার ভেঙেছে!
আমার জানা মতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বিবাহিত জীবনে একাধিক প্রেমে পড়েছেন! উল্লেখযোগ্য হলো “কাদম্বিনী দেবী, ভিক্টোরিয়া কাম্পো, তান্না, ইন্দ্রা, হেমন্ত বালা, রাণু, ইত্যাদি তবে সংসার করেছেন মৃণালিনী দেবিকে নিয়ে! বিদ্রোহী কবি নজরুলের জীবনে অনেক নারী এসেছেন, নার্গিস, শামসুন্নাহার, ফজিলাতুন্নেছা, আশা লতা প্রমীলা দেবি।
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ ভালো বাসতেন এমন একজনকে যিনি নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন! সে ভালোবাসা কবি ভুলতে পারেন নাই! তার ক্লাসে, তার অফিসে এবং তার বাড়ীতে বার-বার গেছেন! তাকে লেখায় এনেছেন বার-বার, মেয়ের বাবা-র কাছে গালমন্দ শুনেছেন, এই হলো জীবনানন্দ দাসের ” বনলতা সেন”! সংসার পেতেছেন লাবন্যের সাথে, লাবন্যর লেখা বইতে জানা যায়, তাদের দাম্পত্য জীবন ছিলো সবচেয়ে অসুখী একটা সংসার! তার ভাষায়, জীবনানন্দ ভালো স্বামী ছিলেন না, ছিলেন না ভালো বাবা! অধ্যাপনা থেকে আরো অনেক চাকরি তিনি ছেড়েছেন মনোযোগী না হতে পেরে! ভালোবাসার অপূর্ণতা অনেককেই হৃদয় ক্ষত সৃষ্টি করে, মানসিক রোগী করে, একই লোকের সাথে সংসার হলে অবহেলায় কোন পক্ষকে ডিপ্রেশনে ফেলে দেয় এবং হাফ ছেড়ে বাচার পথ খোঁজে, কারো কারো বদ্ধ দ্বারে বের হতে না পেরে অকাল মৃত্যু হয়!
“বিরহ” নাকি লেখার সহায়ক তা কবি জীবনানন্দ করেছেন, কিন্তু পান্ডুলিপি বেঁচে বা বই ছেপে জীবন চলে নাই, সন্তান মৃত্যুর পর দাফন কাফনের পয়সা ছিলো না!
নিজ মৃত্যু ও স্বাভাবিক হয় নাই! সেই ট্রামের নিচে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে ইতিহাস বলে! বিশ্বে যত দেশে ট্রাম আছে, ট্রামের নিচে মৃত্যুর সংখ্যা একজন এবং সেজন আমাদের প্রিয় কবি জীবনানন্দ!