
এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে:
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাতবিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলে বঙ্গোপসাগর তীরে দুবলারচরে শুরু হয়েছে এবারের শুঁটকি মৌসুম। মৌসুম শুরুর দুই দিনে সাগরে নেমে প্রচুর মাছ পেয়ে জেলেরা বেজায় খুশী। জেলে মৎস্যজীবিদের পদচারণায় এখন মুখরিত দুবলার আলোরকোলসহ অন্য তিনটি চর। বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, পূর্ব সুন্দরবনের আলোরকোল, মাঝেরকিল্লা, নারিকেলবাড়িয়া ও শেলারচরের ৮১ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে দুবলা জেলে পল্লী। দেশের ৮০ ভাগ শুঁটকি মাছ আহরণ হয় দুবলারচর থেকে। সাগর থেকে লইট্রা, ছুরি, চিংড়ি, রুপচাঁদা, পোয়াসহ না না প্রজাতির মাছ ধরে শুঁটকিকরণের জন্য দুবলার চারটি চরে দশ সহস্রাধিক জেলে সমবেত হয়েছেন। ২৬ অক্টোবর থেকে মার্চ ৫ মাস পর্যন্ত জেলেরা দুবলারচরে অবস্থান নিয়ে সাগরে মাছ ধরবেন। শুঁটকি আহরণ মৌসুমে এবার শুঁটকি পল্লীতে জেলে-বহরদারদের জন্য ১০৪০টি অস্থায়ী ঘর, ৬১টি ডিপো ও বিভিন্ন নিত্যপন্যের ৮০টি দোকান ঘর তৈরীর অনুমতি দেয়া হয়েছে। দুবলার আলোরকোল থেকে সোমবার দুপুরে মোবাইল ফোনে দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুবলারচরে শুঁটকি মৌসুম শুরুটা ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় জেলেরা প্রথম দুদিনে প্রচুর মাছ পেয়েছেন। এ বছর দশ সহস্রাধিক জেলে দুবলারচর অঞ্চলে এসেছেন। জেলেদের মধ্যে জলদস্যু আতংক রয়েছে। জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে তার ফিসারমেন গ্রুপের পক্ষ থেকে কোস্টগার্ড, র্যাব ও পুলিশের উর্ধতন কর্তপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করে এসেছেন বলে দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সভাপতি জানান। শেলারচর জেলে সমিতির সেক্রেটারী রামপালের সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতি মৌসুমে আমরা বিভিন্নভাবে ঋণ করে সুন্দরবনের দুবলার শুঁটকি পল্লীতে যাই। এবছরও ঋণ করে জেলেদের নিয়ে মাছ ধরতে শেলারচর শুঁটকি পল্লীতে এসেছি। আলোরকোলের রামপাল জেলে সমিতির সভাপতি মোতাসিম ফরাজী সোমবার দুপুরে মোবাইল ফোনে বলেন, মৌসুমের প্রথম দিনে আলোরকোলে এসে জেলেদের কেউ তাদের থাকার জন্য অস্থায়ী ঘর বানানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে এবং কেউ সাগরে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন। রবি ও সোমবার সাগরে জেলেরা প্রচুর মাছ পেয়ে বেজায় খুশী হয়েছেন। আলোরকোল ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার তানভির হাসান ইমরান বলেন, জেলেরা রবিবার আলোরকোলে এসেই সাগরে নেমে পড়েছেন। তারা মোটেই সময় নষ্ট করতে চাননা। গত দুই দিনে ধরা মাছ শুঁটকি করার জন্য তাদের বানানো মাচায় বিছিয়ে দিয়েছেন কেউ মাটিতে ত্রিপলের উপর মেলে দিয়েছেন। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, দুবলার শুঁটকি পল্লীতে অস্থায়ী ঘর নির্মাণে জেলেদের দেশীয় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্গে নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের আবাস স্থল নির্মাণে সুন্দরবনের কোন গাছপালা ব্যবহার করতে পারবেনা। জেলেদের থাকার জন্য ১০৪০টি অস্থায়ী ঘর, ৬১টি ডিপো ও বিভিন্ন নিত্যপন্যের ৮০টি দোকান ঘর তৈরীর অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ বছর দুবলারচর থেকে ৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে দুবলারচর থেকে ৫ কোটি ৭৭ লাখ ৭২ হাজার ৬৪৬ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিলো। শুঁটকি আহরিত হয়েছিলো ৬৩ হাজার ৫৪১.৬২ কুইন্টাল । মাছ শিকারের আড়ালে কেউ যাতে সুন্দরবনের বন্যপ্রানী শিকারসহ কোনো গাছপালা কাটতে ও ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য বনরক্ষীরা সার্বক্ষনিক নজরদারী চালাবে বলে ডিএফও জানিয়েছেন।