
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির
সন্ধ্যার আলো ধীরে নিভে যাচ্ছে, শহর ধীরে ধীরে বিশ্রামের দিকে যাচ্ছে। ঢাকার এক ছোট রাস্তায় একজন সাংবাদিক খবরের খোঁজ নিচ্ছেন। তাঁর হাতে কলম, হাতে নোটবুক। তিনি জানতে পেরেছেন—একটি বড় রাজনৈতিক দলের একজন নেতা দেশের মানুষের জন্য অন্যায় করেছেন। যদি তিনি সত্য প্রকাশ করেন, চাকরি ও সম্মান হারাতে হতে পারে। কিন্তু চুপ থাকলে সমাজে অন্যায়ের জয় হবে। রাতভর তথ্য সংগ্রহের পর সাংবাদিকের কলম লিখতে শুরু করে—কারণ তাঁর বিশ্বাস, কলম হলো সমাজের ন্যায়ের হাতিয়ার, রাজনীতির নয়।
এই গল্প কাল্পনিক মনে হলেও বাস্তবতায় এমন সাহসী সাংবাদিক আমাদের দেশে ও বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রতিদিন কাজ করছেন। তাদের কলম হলো তরবারি—অন্যায়ের বিরুদ্ধে, মানুষের মুক্তির জন্য।
মানব সভ্যতার শুরু থেকেই সংবাদ সমাজে প্রভাব ফেলেছে। প্রাচীন সভ্যতায় সংবাদ মানে ছিল রাজপ্রাসাদ থেকে সাধারণ মানুষে বার্তা পৌঁছানো। পরবর্তী সময়ে পত্রিকা, চিঠি, এবং আধুনিক যুগে ডিজিটাল মিডিয়া সাংবাদিকতার মাধ্যম হিসেবে বিকশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতা সবসময়ই সমাজ সচেতনতা ও ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাংবাদিকরা সত্য তুলে ধরেছিলেন আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে। তাদের কলম যুদ্ধের সরাসরি অংশ না হলেও মানুষকে জাগ্রত করেছে।
সাংবাদিকতার মূল আদর্শ হলো: সত্যবাদিতা, নিরপেক্ষতা, নৈতিক দায়িত্ব ও সাহস। একজন প্রকৃত সাংবাদিক কখনো রাজনৈতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করবেন না। তার কলম সমাজকে সচেতন করার হাতিয়ার।
—
অংশ ২: সাংবাদিকতা ও রাজনীতি
রাজনীতি এবং সাংবাদিকতার সম্পর্ক জটিল। একদিকে সাংবাদিকরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে এবং জনগণকে তথ্য দেয়। অন্যদিকে, সাংবাদিকতা যদি রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে নতিস্বীকার করে, তা স্বাভাবিক নিরপেক্ষতা হারায়।
আজকের সময়, অনেক সংবাদমাধ্যম রাজনৈতিক চাপের মুখে সত্য বিকৃত করছে। কিছু সংবাদপত্র দলীয় স্বার্থে সংবাদ প্রকাশ করছে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে, সমাজে বিভাজন বাড়ছে।
সাংবাদিকদের দায়িত্ব হলো—রাজনীতির দাস নয়, জনগণের সত্যের দাতা। কলম হলো মানুষের জন্য, ক্ষমতার জন্য নয়।
—
অংশ ৩: সাংবাদিকতার সংকট ও চ্যালেঞ্জ
ডিজিটাল যুগে তথ্যের ভিড় সাংবাদিকতার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সোশ্যাল মিডিয়া, ফেক নিউজ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব—সবই সাংবাদিককে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলছে।
নৈতিক সংকট সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সাংবাদিক স্বার্থসিদ্ধি বা রাজনৈতিক চাপের কারণে সত্য লোপ করেন। সাহসী সাংবাদিকরা একা লড়াই করছেন। কলমের প্রতি দায়বদ্ধতা তাদেরকে সঠিক পথে রাখছে।
তথ্য যাচাই, প্রেক্ষাপট বোঝা এবং নিরপেক্ষভাবে প্রকাশ করা—সবই সাংবাদিকতার মৌলিক দায়িত্ব।
—
অংশ ৪: সত্য ও ন্যায়ের গুরুত্ব
সাংবাদিকের কাজ হলো সত্য অনুসরণ করা। তথ্য যাচাই, প্রেক্ষাপট বোঝা এবং মানুষের কাছে নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরা অপরিহার্য।
ন্যায়ের জন্য কলম ব্যবহার মানে হলো—অন্যান্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। নারী নির্যাতন, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন—সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সমাজে সচেতনতা তৈরি করে।
যখন সাংবাদিক সত্য ও ন্যায়ের পথে কলম রাখে, সমাজে আস্থা বৃদ্ধি পায়। মানুষ জানে, সংবাদ নিরপেক্ষ এবং সৎ।
—
অংশ ৫: বাস্তব উদাহরণ
মুক্তিযুদ্ধের সাংবাদিকরা: যুদ্ধের খবর বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিয়েছেন, জনগণকে জাগ্রত করেছেন।
আধুনিক যুগে: সাংবাদিকরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেন, সমাজে পরিবর্তনের বাতাস নিয়ে আসছেন।
বিশ্বব্যাপীও সাংবাদিকদের সাহসিকতার উদাহরণ অনন্ত—যেখানে কলম ন্যায়ের পথ দেখিয়েছে।
—
অংশ ৬: প্রযুক্তি ও সাংবাদিকতা
আজকের তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সাংবাদিকদের কাজ সহজ হলেও বিপজ্জনক। ডিজিটাল মিডিয়া দ্রুত সংবাদ পৌঁছে দেয়, কিন্তু ফেক নিউজ ও ভুয়া তথ্যের ঝুঁকি তৈরি করে।
সাংবাদিকদের দায়িত্ব হলো প্রযুক্তিকে সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা। পাঠকের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া হলো সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য।
—
অংশ ৭: নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
সাংবাদিকদের নিয়মিত নৈতিক শিক্ষায় অংশ নেওয়া প্রয়োজন। তাদের জানতে হবে, কলমের শক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়, সমাজের কল্যাণের জন্য।
সত্য প্রকাশ ও ন্যায়ের পক্ষে কলম ব্যবহার করতে পারলে সাংবাদিক সমাজে আস্থা অর্জন করে।
—
অংশ ৮: উপসংহার
সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য—সত্য প্রকাশ, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং সমাজে নৈতিকতার প্রবর্তন। রাজনীতি সাংবাদিকতার শত্রু নয়, তবে রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে সাংবাদিককে নতিস্বীকার করতে পারবে না।
সত্য ও ন্যায়ের পথে কলম রাখাই সাংবাদিকতার চূড়ান্ত পরিচয়। সাহস, নৈতিকতা ও দায়িত্ব—এই তিনটি অনুষঙ্গ সাংবাদিককে সমাজের দিশারী করে।
আজকের তথ্যভরা বিশ্বে, যেখানে মানুষ বিভ্রান্ত, সাংবাদিকদের দায়িত্ব আরও গুরুতর। কলম হোক মানুষের মুক্তি ও সচেতনতার হাতিয়ার, রাজনীতির নয়।
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির চেয়ারম্যান জাতীয় মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম কেন্দ্রিয় কমিটি ঢাকা।