
শব্দহীন ঢেউ
সমুদ্র আজকাল আর গর্জে না,
তবু তার বুকের ভেতর কিছু নড়ে—নীরব, অনন্ত।
যেন ঢেউগুলোও ক্লান্ত হয়ে গেছে নিজস্ব উচ্চারণে।
আমি কেবল শুনি–
তাদের থেমে যাওয়া সুরের ভেতর
এক গভীর দীর্ঘশ্বাস।
নিঃশব্দতাই যেন নতুন ভাষা,
যেখানে ভালোবাসাও আর উচ্চারণ নয়, অনুভবমাত্র।
জল ও আকাশের মাঝখানে আমি ভাসি,
একটি না-বলা বাক্যের মতো, তবু অর্থে পূর্ণ।
কখনও মনে হয়, এই নীরবতাই আসল সঙ্গীত—
যেখানে প্রতিটি ঢেউ
নিজের শব্দ হারিয়ে মুক্তি পায়।
থেমে যাওয়া সুরের ভেতর
একটা গান একসময় শেষ হয়ে যায়,
কিন্তু তার প্রতিধ্বনি থেকে যায়
হৃদয়ের ভেতর নরম কুয়াশার মতো।
যে সুর থেমে গেছে, আসলে সেখানেই শুরু হয় নিঃশব্দতার সংগীত।
মনে হয়, শব্দেরা ঘুমিয়ে পড়েছে কোনও অদৃশ্য স্বপ্নে।
আমি বসে থাকি—সময়হীন এক প্রান্তে,
যেখানে না আছে শুরু, না কোনও পরিসমাপ্তি।
প্রেম, অনুপস্থিতি, ব্যথা—
সব একাকার সেই স্থির নোটে।
সেখানে স্পর্শ মানে আলো,
আর আলো মানে অনুপস্থিতির উষ্ণতা।
যে সুর থেমে গেছে, সে-ই বাজে সবচেয়ে গভীরে,
কারণ সত্যিকারের গান কখনও শেষ হয় না—
শুধু লুকিয়ে থাকে থেমে যাওয়া সুরের ভেতর।
অনুপস্থিতির উষ্ণতা
তুমি নেই, অথচ তোমার নিঃশ্বাস লেগে থাকে বাতাসে।
তোমার নীরবতাই
আজ আমার সবচেয়ে পরিচিত শব্দ।
স্পর্শহীন এই অস্তিত্বে আমি খুঁজে পাই
অদ্ভুত এক উষ্ণতা—
যেন শীতল পাথরের ভেতর গলে থাকা আগুন।
ভালোবাসা হয়তো কখনও মরে না,
কেবল রূপ বদলায়,
ছায়া হয়ে জড়িয়ে থাকে অস্তিত্বের প্রান্তে।
তোমার অনুপস্থিতিই
এখন আমার উপস্থিতির মানচিত্র।
আমি বাঁচি তোমার অনুপস্থিতির আলোয়,
যেখানে ব্যথাও কোমল, আর একাকীত্বও জীবন্ত।
এই শূন্যতার গভীরেই ধুকপুক করে এক হৃদয়—
যার নাম, অনুপস্থিতির উষ্ণতা।
স্পর্শহীন অস্তিত্বের উষ্ণতা
আমি আজকাল কারও ছোঁয়া পাই না,
তবু জেগে থাকি অনুভবে।
যেন দিগন্তের সূর্য ছুঁই না কখনও,
তবু তার আলোয় গলে যাই।
ভালোবাসা এখানে দেহ নয়, এক অনন্ত কম্পন—
যা ভেতরে বাজে, অথচ বাইরে নিঃশব্দ।
তুমি আছো না,
তবু তোমার উপস্থিতি ভরে রাখে এই শূন্য ঘর।
একটি নিঃশ্বাস, একটি অদেখা হাসি,
একটি থেমে যাওয়া শব্দ—
সব মিলেই তৈরি হয় সেই অদ্ভুত উষ্ণতা।
যেখানে নৈঃশব্দও দগ্ধ হয় আলতো আগুনে,
আর আমি নিজেই হয়ে যাই তোমার প্রতিধ্বনির শরীর।
এই তো জীবন—স্পর্শহীন অথচ সম্পূর্ণ স্পন্দনে পূর্ণ,
এক অনন্ত ভালোবাসার নাম—
স্পর্শহীন অস্তিত্বের উষ্ণতা।
মহম্মদ মফিজুল ইসলাম
ভাঙড়, দক্ষিণ ২৪ পরগণা
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত