
কলমেঃ সাহেলা সার্মিন
এই ছবিটা দেখ খোকা–
এটা তোর যখন পাঁচ বছর বয়স
তখনকার তোলা, দেখ্তো কতো সুন্দর লাগছে!
ঠোঁট দু’টো কেমন আপেল রঙের!
আর এখন,আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখ,
কি করেছিস নিজেকে।
সেই সেবার যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়িস
হঠাৎ তোর রুমে সিগারেটের প্যাকেট,
এটা তোর বন্ধু রেখেছে বলে কতো রকমের ওয়াদা করলি।
তারপর একদিন অফিস থেকে হঠাৎ অসময়ে এলাম,
বাসায় এসেতো আমার চক্ষু স্থির!
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে শূন্য বাসায় আড্ডা দিচ্ছিস!
এতোটুকু বয়সেই মা-বাবাকে এভাবে ফাঁকি দেয়া —
কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না।
কি হবে জব করে?
কি হবে টাকা পয়সা দিয়ে?
ছেলে -মেয়েই যদি মানুষ না হয়!
তখন থেকে শুরু হলো গোপন অভিযান,
নিয়মিত ক্লাস, পড়ালেখা এবং কোথায়, ইত্যাদি খোঁজ খবর নেয়া।
অনেক চেষ্টায় এস এস সি তে জিপিএ ৫ হলো, কিন্তু —
সিগারেট ছাড়তে পারলি ন।
কিছুদিন পর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবি-
অথচ এক ওয়াক্ত ভাত নিজ হাতে মুখে তুলিস না,
না খেয়ে থাকলেও না।
তোর মঙ্গল চিন্তায় হাঁসফাঁস করে মরি-
তোর অতিরিক্ত মোবাইল ফোনে আসক্ত
রাত্রি জাগরণ,দর্শনীয় স্থানে যখন তখন ট্যুরে যাওয়া ;
এসব আমার ভালো লাগে না খোকা।
কিন্তু তোকে তো মানাতে পারিনা,
এটাই আমার সবচেয়ে বড় কষ্ট!
কতো স্বপ্ন তোদের দু’ভাইবোনকে নিয়ে,
ঠিক মতো লেখাপড়া করবি,রোজা-নামাজ পড়বি,
মা-বাবার কথাকে মূল্যায়ন করবি।
কি হতভাগ্য মা -বাবা আমরা!
সন্তান যদি কথা না শুনে, কোনো বুঝ যদি না নেয়,
তাহলে তো কিছুই করার থাকেনা!
একমাত্র বুঝ সেদিন হবে, যেদিন তুই বাবা হবি।
তোর সন্তানের থেকে আরো দ্বিগুণ হারে কষ্ট পাবি;
এটা মনে হবে যে,” আমার বাবা-মা আমার জন্য কতো কষ্ট পেয়েছে”
অথচ সেই চোখের জল তোর বাবা-মা দেখতে পাবেনা—–
তুই যেমনই হোস–
প্রাণ উজাড় করা দোয়া ও ভালোবাসা থাকবে সবমসময়।