মোঃ নুর ইসলাম মৃধা
হত্যাকারী মানুষের শারীরিক প্রাণ কেড়ে নেয়—এটি দৃশ্যমান, বোঝা যায়, বিচার হয়। কিন্তু সমাজে এমন ভয়ঙ্কর কিছু মানুষ আছে, যারা সরাসরি কাউকে হত্যা না করেও তার জীবনের আলো নিভিয়ে দেয়। তারা কোনো অস্ত্র প্রয়োগ করে না, কারো গায়ে রক্ত ঝরায় না; বরং তারা নীরবে অদৃশ্য অস্ত্র—কঠোর বাক্য, অপমান, ভয়-ভীতি, মানসিক নির্যাতন—ব্যবহার করে মানুষের মনকে ধ্বংস করে।
এরা মানুষকে মেরে ফেলে না, বরং বেঁচে থেকেও মরে যেতে বাধ্য করে। তাই বলা হয়—মানসিক চাপদাতারা বাস্তব হত্যাকারীর থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর।
শরীরের মৃত্যু মানুষকে যন্ত্রণার অবসান দেয়। কিন্তু মানসিক মৃত্যুর কষ্ট—তা দীর্ঘায়িত, ধ্বংসাত্মক এবং অমানবিক। কারও ক্রমাগত মানসিক চাপে একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়ে, জীবনের প্রতি আগ্রহ নিঃশেষ হয়, হৃদয়ের আলো নিভে যায়। তখন সে হাসলেও হাসি থাকে না, বেঁচে থাকলেও জীবন থাকে না—শুধু একটি চলমান দেহ, ঠিক এক জীবন্ত লাশ।
সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো—এই মানসিক নির্যাতনকারীরা সাধারণত আমাদের সবচেয়ে কাছের জনই হয়। পরিবার, জীবনসঙ্গী, প্রিয়জন, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব কিংবা সহকর্মী—যাদের কাছে নিরাপত্তা আশা করি, তারাই কখনো হয়ে ওঠে ভয়ংকর শত্রু।
মানসিক চাপদাতাদের লক্ষণ
সবসময় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা
অন্যায়ভাবে দোষারোপ করা
নিজের মত চাপিয়ে দেওয়া
স্বপ্ন ও স্বাধীনতা দমন করা
লজ্জা দিয়ে মনোবল ভাঙা
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
নিজের আত্মসম্মানকে প্রাধান্য দিন
সহায়ক ও ইতিবাচক মানুষের সঙ্গে সময় কাটান
বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে সরে আসার সাহস রাখুন
প্রয়োজন হলে পেশাদার কাউন্সেলিং নিন
মনে রাখতে হবে—
নিজের মানসিক শান্তির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই।
যে সম্পর্ক আত্মাকে হত্যা করে—সেটি থেকে মুক্ত হওয়াই প্রজ্ঞার কাজ।
নিজেকে ভালোবাসুন। নিজের মনের দুনিয়াকে নিরাপদ রাখুন।
কারণ—
মানসিক মৃত্যুই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মৃত্যু।
আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ কখনোই কারো হাতে ছেড়ে দেবেন না।
লেখক পরিচিতিঃ
মোঃ নুর ইসলাম মৃধা
এম এ, এলএলবি, এলএইচএমপি
লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট