সরেজমিনে চিতলমারী উপজেলা সদরের কুরমনি মৌজা ঘুরে দেখা যায়, সড়কের দুই বেশকিছু ভবন, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কাঠের তৈরি বসত ঘর, রয়েছে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনাও। উপজেলা সদর বাজার সংলগ্ন পাউবোর ৩৬/১ পোল্ডারের দুই পাশে দীর্ঘদিন ধরে জমি দখল করে এসব ইমারত নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
এখানে রয়েছে চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল খানের তিন তলা বাড়ি। তার বিপরীত পাশে মাস্টার দিন মোহাম্মাদের দুই তলা বাড়ি ও মার্কেট, যে ভবনে রয়েছে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সাইনবোর্ড, শহীদ জিয়া স্মৃতি সংঘের সাইনবোর্ড, কিছুটা সামনে ইসলামী আন্দোলন নেতা জাহাঙ্গীর আলম মুন্সির তিনতলা ভবন, জেলা বিএনপি নেতা মঞ্জুর মোরশেদ স্বপনের একতলা ভবন, ডা. কাজী মফিদুল ইসলাম বাবুলের দুই তলা ভবন- এরকম অসংখ্য পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা ভবন রয়েছে এই সড়কের দুই পাশে।
স্থাপনা উচ্ছেদে তালিকা ও চিঠি চালাচালি হলেও এতদিনে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। সবশেষ গত ২৭ অক্টোবর ১৭২টি অবৈধ স্থাপনার মালিককে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে পাউবো। দখলদার ও স্থানীয়দের ধারণা, এবারও চিঠি দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বাঁধের দুই পাশের স্থাপনার বিষয়ে জানতে স্থানীয় অন্তত ১০ জনের সাথে কথা বললে তারা জানান, সড়কের দুই পাশে ফাঁকা জায়গা ছিল। বালু ভরাট করে এসব ভবন করেছে। যখন যারা ক্ষমতায় থাকে তারাই ভবন নির্মাণ করে। এসব ভবন ও ইমারত পানি উন্নয়ন বোর্ডের অজানা নয়। একটা তিন তলা ভবন করতে কমপক্ষে এক বছর লাগে, যখন নির্মাণ করেছে তখন কেন বাঁধা দেয়নি।
এই চিঠি দিয়েছে, আবার দেখবেন, দখলদাররা বহাল তবিয়তে আছে। আসলে টাকার কাছে সবাই দুর্বল, যোগ করেন তারা।
এদিকে বড় দখলদারদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল হোসেন খান কারাগারে রয়েছেন। আরও কয়েকজনকে ফোন করলে এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে ইসলামী আন্দোলন নেতা জাহাঙ্গীর আলম মুন্সি বলেন, যে জমিতে তার ভবন রয়েছে ওই জমি তিনি পৈতৃক সূত্রে পেয়েছেন। উপজেলা পরিষদ থেকে ভবনের নকশার অনুমোদন নিয়ে তিনি এই ভবন করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দখলদার বলেন, দেখেন- সরকারি জায়গায় সরকারি লোকের সম্মতি ছাড়া আমরা ভবন করিনি। কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে ভবন করেছি।
এর আগে পাউবো, বাগেরহাটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ছিলেন সমীর বিশ্বাস। দখলদারদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ ও চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় পাউবো।
এ বিষয়ে পাউবো বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নতুন করে কেউ যাতে অবৈধ দখল করতে না পারে; সেজন্য কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। আর নোটিশ জারির পরে নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।
দখল প্রক্রিয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই দপ্তরের কোনো কর্মচারী-কর্মকর্তা যদি এমন কোনো কাজে যুক্ত হয়। তার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।