
মোঃ নুর ইসলাম মৃধা
গবেষক, সমাজবিশ্লেষক, কলামিস্ট ও আইনজীবী।
ভদ্রতা—শুধু একটি আচরণ নয়, এটি একটি চরিত্র। ভদ্র মানুষ সহজেই উত্তেজিত হয় না, অকারণে তর্কে জড়ায় না, কথার ঝগড়া দিয়ে নিজের মানসিক শান্তি নষ্ট করে না। কারণ সে জানে, প্রতিটি শব্দের মূল্য আছে এবং সেই শব্দ অকারণে অপব্যয় করা বোকামি।
সমাজে প্রায়ই দেখা যায়—ভদ্র মানুষ যখন নীরব থাকে, তখন অনেকেই মনে করে সে দুর্বল। তারা ভাবে—এতো চুপ করে আছে নিশ্চয়ই জবাব দেওয়ার ক্ষমতা নেই! এই ভাবনাটিই আসলে একটি বড় ভুল। কারণ, ক্ষমতার অপব্যবহার যেমন আত্মবিনাশ ডেকে আনে, তেমনি শক্তির অপপ্রকাশও মানুষের চরিত্রকে ছোট করে দেয়।
নীরবতা মানেই দুর্বলতা নয়। বরং অনেক সময় নীরবতাই সবচেয়ে শক্ত এবং মার্জিত জবাব। নীরব মানুষ জানে—প্রতিপক্ষ যখন উত্তেজিত, তখন কথা বলা মানে আগুনে ঘি ঢালা। তাই সে চুপ থেকে পরিস্থিতি শান্ত করে, সুযোগ দেয় অন্যকে নিজের ভুল বুঝতে।
আমরা ভুলে যাই, বাঘ কখনো তার শক্তি দেখাতে ঘেউ ঘেউ করে না। বরং নিঃশব্দে লক্ষ্যভেদ করে। মানুষও তেমন—যে যত শক্তিশালী, সে তত কম বলে।
জ্ঞানীরা বলেন—
“বুদ্ধিমান মানুষ বিতর্কে সময় নষ্ট না করে কাজ দিয়ে জবাব দেয়।”
সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা অহংকারকে শক্তি ভাবে। তারা মনে করে উচ্চস্বরে কথা বললেই প্রভাব বাড়ে। প্রকৃতপক্ষে, এটি হলো আত্মবিশ্বাসের অভাবের বহিঃপ্রকাশ। নিজের ভিতরে যখন শূন্যতা থাকে, তখনই মানুষ শব্দের আড়ালে নিজেকে লুকায়।
অন্যদিকে, ভদ্র মানুষ জানে—
শান্তি কোনো দুর্বল মানুষের গুণ নয়, শান্তি হলো নিয়ন্ত্রণের উচ্চতম শক্তি।
তাই সে রাগ, অভিমান, অপমান—সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে স্থির থাকে। তার নীরবতা অনেক সময় অভদ্র মানুষের কাছে লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, অশালীনতা তখন নিজের দুর্বলতা ফাঁস করে দেয়।
আজকের সমাজে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এই নীরবতার শক্তিকে উপলব্ধি করা। প্রতিপক্ষকে অপমান করে জয় নয়; বরং নিজের চরিত্র অটুট রেখে জয়ী হওয়াই প্রকৃত সাফল্য।
মনে রাখবেন—
“যে মুহূর্তে আপনি চুপ থাকলেন, আপনি আপনার সম্মান বাঁচালেন।”
ভদ্রতা কারো পরাজয় নয়। নীরবতা কোনো হার নয়। বরং এটি সেই অবস্থান, যেখানে সময় নিজেই বিচারক হয়ে দাঁড়ায়—
আর তখন প্রমাণ হয়—
শান্ত মানুষটাই আসলে সবচেয়ে শক্তিশালী।