
মোঃ নুর ইসলাম মৃধা
এক সময় নীরবতা আমাদের প্রিয় হয়ে যায়। বয়স বাড়ে, অভিজ্ঞতা জমে—আর আমরা বুঝতে শুরু করি কে কেমন, কার কাছে কথা বলা যায়, কার কাছে বলা মানেই নিজেকে ছোট করে দেওয়া। তখন আর সবার সাথে কথার জোয়ার বইতে ইচ্ছা করে না। আমরা নিঃশব্দ হয়ে যাই, কারণ মুখ খুললেই কিছু মানুষ সুযোগ নেয়, আবার কেউ কেউ ভেবে বসে—আমাদের বলার মতো কিছুই নেই! অথচ, নীরবতা কখনো কখনো সবচেয়ে শক্ত জবাব—এটা তারা বোঝে না।
মানুষকে প্রকৃতভাবে চিনে ফেলার পর কথার প্রয়োজন থাকে না। কোনো সম্পর্কের ভাঁজে লুকানো স্বার্থ, মিথ্যা হাসি আর অভিনয়ের মুখোশ দেখার পর আমরা ধীরে ধীরে শিখি—সবাই আপনার আপন নয়। পাশে দাঁড়ালেই সম্পর্ক হয় না, হৃদয় দিয়ে বুঝলেই সম্পর্ক টিকে থাকে। আর যখন বোঝা হয়ে যায় সম্পর্কগুলো একদিন মিথ্যা মনে হবে—তখনই শুরু হয় দূরত্ব, কমে যায় প্রত্যাশা, বাড়ে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ততা।
প্রাপ্তি!—শব্দটা বড় সুন্দর। কিন্তু এর অস্তিত্বও বড় সাময়িক। আজ যে জিনিস পাওয়া মানে সীমাহীন আনন্দ—কয়েকদিন পর তা আবার সাধারণ হয়ে যায়। মানুষ সবসময় চাইতে থাকে—আরও, আরও একটু বেশি! এভাবেই আমাদের তৃপ্তির সীমা ক্রমাগত বদলে যায়। ফলে, যা পেয়ে খুশি হয়েছি—কিছুদিন পর তা আর তেমন মূল্যবান লাগে না। এই পরিবর্তনশীলতা আমাদের শেখায়—জীবনে কোনো প্রাপ্তিই স্থায়ী নয়।
ধীরে ধীরে আমরা বুঝে যাই—শান্তি কোথাও বাইরে নয়, নিজের মধ্যেই। মানুষের ভিড়ে থেকেও একাকী হয়ে যাই; কিন্তু সেই একাকীত্বেই কখনো সবচেয়ে বেশি স্বস্তি মেলে। কারণ সেখানে নেই হিসাব-নিকাশ, নেই অভিনয়, নেই ভণ্ডামি। সেখানে শুধু আমরা—আমাদের সত্য রূপে।
তাই আজকাল নীরব থাকা কোনো দুর্বলতা নয়—এ এক ধরনের শক্তি। যেদিন আপনি কথা বলাকে নয়, নীরবতাকে বেছে নেবেন—সেদিন থেকেই আপনার পরিপক্বতার সূচনা। কারণ বুঝে যাওয়ার পর আর বলার প্রয়োজন থাকে না। তখন আমরা শিখি—নীরবতা শুধু শব্দহীনতা নয়; এটা নিজের প্রতি সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধতা।
লেখক পরিচিতি:
মোঃ নুর ইসলাম মৃধা
(এম এ, এলএলবি, এলএইচএমপি)
গবেষক, সমাজবিশ্লেষক, কলামিস্ট, কবি ও আইনজীবী
পটুয়াখালী সদর, পটুয়াখালী।