বিশেষ প্রতিনিধি:
বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুষ্ট সিন্ডিকেট পেঁয়াজ এর মূল্য ৩০০ টাকা করেছিলো, ডিম করেছিলো ডজনন১৮০ টাকা । এই দুষ্ট সিন্ডিকেরে মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সমস্ত চেলা-চামুন্ডারা ছিলো। আমাদের সন্তানরা বলছে ৫ই আগস্ট আমরা স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এখনও আওয়ামী লীগের সেই বাজার সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি। এখনও সেই সিন্ডিকেট জাতির ঘাড়ে বসে আছে। এই সিন্ডিকেট ভেঙে তছনছ করে দিতে হবে। বিগত সরকারের সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। গতকাল ২১ নভেম্বর ২০২৫ জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দেলন আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত ঢাকা ৯ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী কবির আহমদ এসব কথা বলেন।
নিত্যভোগ্য পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি ও ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের ধারাবাহিক অপকর্মের প্রতিবাদে বিশেষ ট্রান্সফোর্স গঠন করে বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি-কারীদের চিহ্নিত করা, অপরাধীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা, ভোগ্যপণ্যকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা এবং কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবিতে নাগরিক সমাবেশ ও মানববন্ধন শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বিকেল তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত ঢাকা ৯ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী কবির আহমদ। প্রধান বক্তা ছিলেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম জাতীয় কমিটির মহাসচিব এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মির্জা শরিফুল আলম, আধিপত্যবাদ বিরোধী জনতার মঞ্চের প্যানেল চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম এ ইউসুফ, জাতীয় পর্যবেক্ষক পরিষদের সভাপতি রেহেনা সালাম এবং বাংলাদেশ ইসলামিক দলের চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ুন কবির সহ জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।
মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান এর সভাপতির বক্তব্য বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশই এখন একটি দেশ, যেখানে প্রশাসনের চেয়েও সিন্ডিকেট শক্তিমান। পিয়াজ, তেল, ডিম, মাছ, সবজি এমন কি কচুর লতিও চ্যাপা শুঁটকিতেও সিন্ডিকেট। শ্রম বাজার, পরিবহন জগতেও সিন্ডিকেটের নাটাই। তা মাদকের কেনাবেচায়ও। এ থেকে মুক্তির কি উপায় নেই?
তিনি আরো বলেন, একদিকে মাঠপর্যায়ের কৃষক ঠকছেন, পাচ্ছেন না ন্যায্য দাম; অন্যদিকে হাটে-বাজারে ঠকছেন ভোক্তা, দামের ঊর্ধ্বগতিতে পকেট কাটা যাচ্ছে তাদের। কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছতে একটি পণ্য পাঁচ-ছয় হাত বদল হচ্ছে। হাটে ও মাঠে-ঘাটে চলছে চাঁদাবাজী। যার ফলে ক্ষেত্র বিশেষে দাম দশ গুণেরও বেশি বেড়ে যাচ্ছে। এসব মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফার ফাঁদে পড়েছে।
মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান আরো বলেন, বাজারে গিয়ে মানুষ দিশাহারা। চড়া দামের জন্য বাজারে যাওয়া যাচ্ছে না। পেঁয়াজ, তেল, সবজিসহ সবকিছু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। রাষ্ট্র সংস্কারের সমান্তরালে এই সিন্ডিকেট দমনও জরুরি। বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া ও তাদের সাজার আওতায় আনার বিকল্প নেই। এরই মধ্যে চক্রটি বুঝিয়ে দিয়েছে, এরা দমবে না। সরকার বা কেউ তাদের দমাতে পারবে না এমন একটি ভ্যাংচি-আস্ফালন লক্ষনীয়। বর্তমান সরকার অরাজনৈতিক। তার কোনো সিন্ডিকেট পোষার দরকার পড়ে না। সেই বিবেচনায় সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে তাদের রুখে দেয়ার কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই। তারপরও কেন কুলাতে পারছে না সরকার? এর বিপরীতে সিন্ডিকেট বা চক্র বিশেষ রীতিমতো বেপরোয়া। তারা যথেচ্ছ দাম বাড়িয়ে লুটে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের কষ্টের অর্থ। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মৌলিক ও প্রধানতম উপকরণ হচ্ছে নিত্য খাদ্যপণ্য। এই খাদ্যপণ্যের মূল্য যখন ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তখন জনরোষের সাথে দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়ে পারে না।
এসময় প্রধান বক্তা এম পফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে সরকার ও ভোক্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সিন্ডিকেট রুখতে সরকারি হস্তক্ষেপ জোরদার, নজরদারি বৃদ্ধি, মজুতদারি প্রতিরোধ এবং শক্তিশালী ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে কয়েকদিন পর পরই হইচই হয়৷ তারাই বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ৷ সরকারের দিক থেকেও এই সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়৷ কিন্তু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়না কেন?
এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী আরো বলেন, সিন্ডিকেটের মূল কাজ হলো সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা দেয়া৷ এটা করতে গিয়ে তারা পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে দেন এবং পণ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেন৷ মূল কথা হলো বাজারে পণ্যের সরবারাহ ও চাহিদার স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে বাধাগ্রস্ত করা৷ বাজারে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কমিয়ে দিলেই দাম বেড়ে যায়।