
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে নীরবে কিন্তু দৃঢ় পদচারণায় যাঁরা নিজেদের অবস্থান তৈরি করছেন, তাঁদের মধ্যে নেত্রকোনার রূপা রানী সরকার এক উজ্জ্বল নাম। শব্দের সঙ্গে যাঁর সম্পর্ক হৃদয়ের, অনুভূতির সঙ্গে যাঁর বসবাস—তিনি কবিতাকে ধারণ করেন জীবনযাপনের এক অনিবার্য অংশ হিসেবে।
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করলেও বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন নেত্রকোনা শহরে। শৈশব থেকেই তাঁর বেড়ে ওঠা প্রকৃতি, নদী, মাঠ আর গ্রামবাংলার সরল সৌন্দর্যের আবেশে। এই পরিবেশই ধীরে ধীরে তাঁর মননে বুনে দেয় সাহিত্যপ্রেমের বীজ। ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি এক গভীর আকর্ষণ, কবিতার প্রতি দুর্নিবার টান এবং সংস্কৃতিচর্চার প্রতি এক স্বাভাবিক অনুরাগ তাঁকে নিয়ে আসে লেখালেখির জগতে।
বর্তমানে তিনি একজন শিক্ষার্থী। শিক্ষাজীবনের ব্যস্ততার মাঝেও তিনি সংগীত ও সাহিত্যচর্চায় নিজেকে নিবিড়ভাবে যুক্ত রেখেছেন। তাঁর কাছে সাহিত্য কেবল অবসর যাপনের অনুষঙ্গ নয়, বরং আত্মপ্রকাশের এক গভীর মাধ্যম। জীবনের নানা অনুভব, প্রেম-বিরহ, প্রকৃতির নীরব ভাষা, সময়ের প্রবাহ এবং মানুষের অন্তর্গত জীবনবোধ—এসবই তাঁর কবিতায় হয়ে ওঠে স্পষ্ট ও সংবেদনশীল।
রূপা রানী সরকারের কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তার কোমলতা ও গভীরতা। তাঁর লেখায় প্রেম কখনো আবেগের উচ্ছ্বাসে, কখনো নিঃশব্দ অপেক্ষায় ধরা দেয়। প্রকৃতি তাঁর কবিতায় কেবল দৃশ্যমান অনুষঙ্গ নয়—বরং তা হয়ে ওঠে জীবনের প্রতিচ্ছবি। নদী, আকাশ, বৃষ্টি কিংবা সন্ধ্যার আলোছায়ায় তিনি খুঁজে পান মানুষের একাকিত্ব, আশা কিংবা নীরব আর্তি। একই সঙ্গে সময় ও জীবনবোধ নিয়ে তাঁর কবিতায় রয়েছে এক ধরনের দর্শন—যা পাঠককে ভাবতে শেখায়, থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করে।
ইতিমধ্যে তাঁর লেখা বাংলাদেশের বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তরুণ কবি হিসেবে এই স্বীকৃতি তাঁর সাহিত্যযাত্রাকে আরও দৃঢ় করেছে। পাঠকের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসা ও প্রতিক্রিয়া তাঁকে নতুন করে অনুপ্রাণিত করছে, দিচ্ছে এগিয়ে চলার শক্তি।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত একটি যৌথ কাব্যসংকলনে তাঁর অংশগ্রহণ তাঁর সাহিত্যজীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এই সংকলনের মাধ্যমে তিনি বৃহত্তর পাঠকসমাজের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ পেয়েছেন। এটি তাঁর জন্য কেবল একটি প্রকাশনা নয়, বরং সাহিত্যপথে এগিয়ে চলার এক নতুন ধাপ, এক নতুন আত্মবিশ্বাস।
রূপা রানী সরকার বিশ্বাস করেন—সাহিত্য মানুষের মনকে মানবিক করে তোলে, সমাজকে আলোকিত করে। তিনি মনে করেন, কবিতা মানুষের অনুভূতির ভাষা, যা যুগে যুগে মানুষকে বাঁচতে শেখায়। সেই বিশ্বাস থেকেই তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন—নিজের মতো করে, নিজের অনুভবের আলোয়।
বাংলা সাহিত্যের আকাশে রুপা রানী সরকার এখনও হয়তো উদীয়মান নক্ষত্র, তবে তাঁর লেখার গভীরতা, নিষ্ঠা ও সততার আলোয় ভবিষ্যতে তিনি যে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবেন—সে আশাবাদ রাখাই যায়। নেত্রকোনার মাটি থেকে উঠে আসা এই তরুণ কবির সাহিত্যযাত্রা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে—এমন প্রত্যাশাই পাঠকের।