ক্রাইম রিপোর্টার:
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায় এক ঠিকাদারকে অপহরণ করে আটকে রেখে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আরও একজন অজ্ঞাতনামা আসামি পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীর দায়েরকৃত এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার সোনাতুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ঠিকাদার অলিয়ার রহমান (৫৩) গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে বটিয়াঘাটা উপজেলার লক্ষীখোলা গ্রামে একটি পাওয়ার প্লান্টে শ্রমিক সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যান। এ সময় উত্তম কুমার দে (৩২) নামের এক ব্যক্তি তাকে চা খাওয়ানোর কথা বলে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। পরে সেখানে বাপ্পি মল্লিক (৩৫)সহ আরও কয়েকজন তাকে একটি ঘরের ভেতর আটকে রেখে মারধর করে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, অভিযুক্তরা অলিয়ার রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তার ভাতিজাকে ফোন করে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং টাকা না দিলে তাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ভুক্তভোগীর স্বজনরা ভান্ডারকোট পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেন।
পুলিশ জানায়, পরবর্তীতে অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীকে বটিয়াঘাটা উপজেলার ভান্ডারকোট এলাকার কালুকাটী খালের গোড়ায় বাপ্পি মল্লিকের দখলে থাকা একটি ঘেরের ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে তার হাত-পা বেঁধে মুখে কস্টেপ লাগিয়ে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।
খবর পেয়ে ভান্ডারকোট পুলিশ ক্যাম্প ও বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে প্রথমে উত্তম কুমার দেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৯ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১টার দিকে ঘেরবাড়িতে অভিযান চালিয়ে বাপ্পি মল্লিককে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অপহৃত ঠিকাদার অলিয়ার রহমানকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় একজন আসামি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।অভিযানকালে পুলিশ একটি স্টিলের চাকু, রশি, কস্টেপ এবং একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন জব্দ করে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী অলিয়ার রহমান বটিয়াঘাটা থানায় অপহরণ, চাঁদাবাজি ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গ্রেপ্তারকৃত বাপ্পি মল্লিক ও তার সহযোগী উত্তম কুমার দে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা (ইয়াবা), ঘের ও খাস জমি দখল, গরু-ছাগল চুরি, ভ্যান, সাইকেল ও মোটরসাইকেল চুরিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা অবিলম্বে এসব অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, অপরাধীদের কারণে ভান্ডারকোট ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে।
এ বিষয়ে বটিয়াঘাটা থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনতে তদন্ত জোরদার করা হয়েছে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।