মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
কবিতা: রক্তাক্ত ফিলিস্তিন নতুনতারা সমাজকল্যাণ ও সাহিত্য সংস্থা আয়োজিত সোমবারের সাপ্তাহিক আড্ডা অনুষ্ঠিত কবিতাঃ বৈচিত্র‍্যময় মানুষ ঝালকাঠি জেলার খাজুরা গ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন্দ্রনাথ হালদার এর মৃত্যুতে কীর্ত্তিপাশা থানা কর্তৃক রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় শেষ কৃতদাহ নাম দিয়েছি পরাণ তোমায় নরসিদীর রায়পুরায় মেঘনার থানা বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারক লিপি প্রদান গল্প:- অচেনা সেই চোখজোড়া সুন্দরবনে অভয়ারণ্যে নিষেধাজ্ঞার মাঝেই  বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার জীববৈচিত্র হুমকির মুখে সুন্দরবনের উপকূলে বোরো ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন সাতকানিয়া উপজেলার ১৬ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদে খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক হত দরিদ্রদের মাঝে ১৫ টাকা মূল্যে খাদ্য শস্য বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত

গল্পঃ- সন্দেহে রাঙ্গা ধর্ম

Coder Boss
  • Update Time : সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৪২ Time View

 

মোঃ আহসান কবির রিজওয়ান 

সিগারেটের মোথার ধোঁয়া কীভাবে হিন্দু-মুসলিমের বন্ধুত্বকে পুড়ে দেয় এই নিয়ে আজকের গল্পটা। তুফান গতকাল ঢাকা থেকে এসেছে তার গ্রামের বাড়িতে, সাথে এসেছে বাল্যকালের বন্ধু রাছেল! আর রাছেলের বাড়ি ফের অন্য ডিসট্রিক্ট-এ। আজ তারা নদের তীরে চায়ের দোকানে বসে চা ফুঁকাচ্ছে। সেখানেই উপস্থিত হলো বিষ্ণু দে, তুফানদের পার্শ্ববর্তী গ্রামেই থাকে বিষ্ণুরা। বিষ্ণু তুফানকে দেখে বলল, তুমি কবে আসলা?’ তুফান বলল, গতকালকে। তুমি  এখানে কি করছো?’
“বন্ধু নদের ঢালুতে ব্লক বসানোর কাজে আসছি ত, তাহলে বিকালে আমাদের গ্রামে ঘুরতে আসিও” বিষ্ণু বলল।
বিষ্ণু একটা সিগারেট কিনে মুখ দিয়ে টানতিছে আর ধোঁয়া বের করছে। তুফান বিষ্ণুকে বলল, এসব খাওয়া ছেড়ে দিতে পারো না! তোমার মাজাটা ত শুকে যাবে।’ বিষ্ণু ‘হুম’ বলে কাজের উদ্দেশে চলে গেল। চা’দোকানে মানুষেরা গল্প করছে। গল্পটা হচ্ছে তাজুল নামের এক ছেলেকে নিয়ে। কদিন আগে রাত সাড়ে দশটায় দুর্গা পূজায় প্যাণ্ডেল ছিড়ে মণ্ডুপে নাকি দশটা আপেল পড়ছে আর এই নিয়ে শুরু হয়েছিল আতঙ্ক-হট্টগোল। কে এই আপেল প্যাণ্ডেলে ঢিল মারছে? পুরোহিত বলছে এটা অমঙ্গলের বার্তা। সে সময় মন্দিরের পাশপথ দিয়ে তাজুল একটু জোরে হেঁটে চলতে শুরু করছিল তার বাড়ির ফেরার উদ্দেশে। জোরে হাঁটায় সবাই সন্দেহ করে তাজুলকে থামায়, তাকে বলল কোথায় গেছলি?’ তাজুল বলল, বাজারে।’ বলা হলো কিসের জন্য?’ সে বলল, মা অসুস্থ তাই তার জন্য ফল আর ওষুধ কিনে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে বহু সময় বাজারে ব্যয় করছি এখন বাড়িতে গিয়ে পড়তে হবে।’ তারা তাজুলের ব্যাগ চেক করে পায় হাপ কেজি আপেল। কিরে এর ব্যাগে আপেল! প্যাণ্ডেল ছিড়েও পড়ছে আপেল, তাড়াতাড়ি হাঁটার কারণ কি? তাহলে বুজি তাজুলই প্যাণ্ডেলে আপেল ঢিল মারছে। তারা সন্দেহবসত তাজুলকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিল। আদতে কি তাজুলই এসব করছে? সবার মাথায় প্রশ্নের ঘুরঘুর। এটা কি ষড়যন্ত্র হতে পারেনা বা অনর্থক? যেমন গত তিন বছর আগে বিনাদোষে হাসানকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাহলে হাসানের গল্পটা শেয়ার করছি। হাসান হিন্দু-মুসলিম সবার সাথেই মিশে। একদিন অনিক রায় হাসানকে বলল, আজ তুই সন্ধ্যায় আমাদের মন্দির ঘুরতে আসিস।’ হাসান ঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়াতে অনিক তাকে সবার মাঝে নাড়ু বিতরণ করার দায়িত্ব দিয়ে বলে আজকে সবাইকে খুশি করানো হবে। বিশিষ্ট ব্যবসায়িকগণরা এই উদ্যোগ নিয়েছে, আমাদেরকে বলছে বেশি করে নাড়ু বানাতে।’ হাসান যাকেই নাড়ু দেয় সে লোকেই তা খেয়ে কিছুক্ষণ পর থেকে নাচানাচি শুরু করে। ব্যাপার কি, তারা কি খুশি হয়ে নাচে? গান বাজালেও নাচে, না বাজলেও নাচে। গাছে টাঙানো ব্যানারে উল্লেখ করাছিল আজকে সবাই আনন্দ করবে। তাই কেউ এ বিষয় নিয়ে সন্দেহ করেনি। প্যাণ্ডেল ঝিলিমিলি বাতি দিয়ে সাজানো। রাত্রি আনুমানিক সাতটার সময় প্যাণ্ডেলের পিছনে চার-পাঁচজন জুয়া খেলছিল। জুয়া খেলতে তো চারদিক গুছিয়ে বসতে হয়। তাদের মধ্যে একজন মণ্ডপ মুখী হয়ে বসে। সে সিগারেট ধোঁয়া উড়া অর্ধেক অংশ ফেলে দিল, তার হাতে একটা ম্যাচ! খেলায় হেরেছে বিধায় ম্যাচটিকেও রাগ করে ঢিল মারল। এবং আরেকজন কেবল মাত্র সিগারেটে আগুন লাগাইছে, যেই মাত্র সিগারেটে টানদিল তখনি তার মুখ থেকে কাশের খকখক শব্দ বের হলো আর সেসময় আনসার এসে তাদেরকে সেখান থেকে চলে যেতে বলল। সেও সিগারেট সেখানে ছুড়ে দিয়েই সবার সাথে জায়গাটি পরিত্যাগ করে প্যাণ্ডেলের সামনের দিকে পলপুঞ্জের ওখানে চলে আসলো। হাসান কখনো নাড়ু দেয় কখনো বসে বসে আরতি দেখে। সে বাড়িতে বলে এসেছে আজকে মন্দির থেকে বাড়ি ফিরবে গভীর রাতে।’ রাত ১০:৪৬ বাজে। হাসানকে কল করল কানন। হাসান প্যাণ্ডেলের পিছনে প্যাণ্ডেলের উল্টো দিকে খাদে মুখ ঘুরিয়ে কথা বলছে আর ভেইপ টানছে! অবশ্য ভেইপ টানা তার নেশার মত, এতে নাকি ক্ষতিকর পদার্থ নাই: সে বলেছে আরকি। রাত এগারোটার সময় প্যাণ্ডেলের পিছ অংশ থেকে আগুনের ধোঁয়া উড়ছে। এটি ঝিলিক বাতির কামাল নাতো? নাহ, নাকে কাপড় পুড়া গন্ধ আসছে। সবাই প্যাণ্ডেলের পিছনে গিয়ে দেখল প্যাণ্ডেলের কাপড়ে আগুন, মূর্তির চুলে আগুন পৌঁছা পৌঁছা অবস্থা এবং হাসানের মুখ থেকেও ধোঁয়া উড়ছে। অবশ্য আর দুমিনিট দেরি করে গেলে তারা দেখতে পেত মূর্তির মাথায় আগুন লাগা। কজন প্যাণ্ডেলে জল ছেটাতে লাগল আর হাসানকে বেঁধে রাখল গাছের সাথে। ঘটনাটি নাকি ধার্মিকের বুকে আঘাত দিয়েছে। তারা পুলিশকে কল করে হাসানকে ধরিয়ে দিতে, ঘটনাস্থলে আনসার রওনোক হাসানকে চেক করে তার কাছ থেকে একটি দুশো টাকার নোট, একটি বাটন ফোন ও একটি ভেইপ ছাড়া আর কিছু পায়নি। প্রথম দিন তাকে থানায় কিছু খেতে দেওয়া হলো না। আনসার রওনোক পুলিশকে পুরো ঘটনা বলতে লাগল অর্থাৎ তিনি যা যা দেখেছে। নাড়ুর ঘটনা উল্লেখ হওয়াতে পুলিশ নাড়ুকে সংরক্ষণ করে গবেষণার জন্য। পুলিশ হাসানকে প্রচুর মারধরও করেছে, হয়তো তাঁদেরকে এমনটা ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। নাড়ুতে মিশানো ছিল মাদক জাতীয় মেডিসিন, যা খেলে মানুষ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে কম (পারেনা বললেই চলে), মাতলামি প্রায় তিন ঘন্টা থাকে। তাহলে কি হাসান নাড়ুতে এসব মিশিয়েছে? আগুন নিভাতে যেহেতু মণ্ডপে জল ছেটানো হয়েছে তাই জলের কোপে মূর্তিতেও ক্ষত সৃষ্টি হয়ে পলের দেখা মিলেছে কিছু কিছু অংশে, তাছাড়া আগুনের ঘটনা তো ঘটেই গেল। বিপদের সময় কারো কারো মস্তিষ্ক কাজ করতে চায় না। তাই সেই মন্দিরে ভক্তি দেওয়া নিষিদ্ধ এবং ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা পার্শ্ববর্তী মন্দিরে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়। যেহেতু সাংবাদিকরা এটি প্রচার করেছে তাই এখানে পুলিশের দূর্বলতা থাকা ঘৃণিত কাজ। কিভাবে আগুন লেগেছিল তা তদন্ত করার জন্য মন্দিরে কিছু পুলিশকে মোতায়েন করা হয়। প্রথমে সেখান থেকে রহস্যজনিত কিছু পাওয়া যায়নি। খাদে পড়ে আছে অনেকগুলো মলিন-অমলিনের ন্যায় সিগারেটের মোথা আরো রয়েছে প্লাস্টিক-পলিথিন, আবর্জনা। এই ব্যাপারে আর কদিন তদন্ত চলবে? সারা বছর তো এটা নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না, প্যাণ্ডেলের পিছনেও মলিন হওয়া একটা কালো সিগারেটের মোথা পড়েছিল যা হয়তো এতদিন চোখে পরেনি। সিগারেট তো ছোট-বড় সবাই খায়, কেউ খেয়ে বুজি ফেলে রাখছে। সব আনসারদের কাছেই জানতে চাওয়া হয়েছে সেদিন সকাল থেকে রাত্রে অর্থাৎ আগুন লাগা পর্যন্ত মন্দিরে কি হয়েছিল? কোন অসন্তোষ কিছু দেখছে কি-না? প্যাণ্ডেলে/ প্যাণ্ডেলের পিছনে কারা কি করেছিল? কাউকে সন্দেহ হয়েছিল কি-না যার যতটুকু মনে আছে সব ব্যক্ত করতে। সেই আনসারটিকেও প্রশ্ন করা হয়েছে যিনি সাতটার কিছুক্ষণ পরে প্যাণ্ডেলের পিছন থেকে চার-পাঁচজন জুয়ারুকে খেদিয়ে দেয়। তিনি ব্যক্ত করতে লাগলেন রাত সাতটার দিকে ঘটে যাওয়া, তাঁর নজরে পড়া ঘটনা। এক জুয়ারু খেলায় হেরে গেছে বিধায় সেখানে একটি ম্যাচ ও ধোঁয়া উড়া অর্ধেক সিগারেট ফেলছিল আরেকজন সিগারেট মুখে নেওয়ায় কাশি পেলে সেও সিগারেট ফেলে দেয়। এই সিগারেটই তদন্তের খুটিনাটি। আচ্ছা এটা কি ষড়যন্ত্র? নাহ। হাসান দুস্কর্ম করছে কি-না এর জলজ্যান্ত প্রমাণ নাই। বন্ধুত্বের প্রতি বিশ্বাস ছিল বিধায় ত সে নাড়ু বিতরণ করার দায়িত্ব পেয়েছিল। হতে পারেনা, এক মাতালে দোষ করে আরেক মাতাল দোষী? এই গ্রামের মানুষ কি নেশা করে না। যাদের বাড়িতে নাড়ু বানা হয়েছিল তাদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ গিয়েছে তদন্ত করার জন্য। অবশ্য একটি বাড়িতে এই নেশা জাতীয় বস্তুর মিল পাওয়া যায় অর্থাৎ সেই বাড়িতেও নাড়ু বেনে ছিল। যখন নাড়ু বানা হয় সেই বাড়ির একটি লোক ও অনিকের বাবা এক সাথে এই নেশা জাতীয় মেডিসিন খেয়ে ঘরে গিয়েছিল নারিকেলের চাঁছা ও কোরা রান্না ঘরে নিয়ে যেতে তখন তাদের হাতের কৌটা থেকে নারিকেলে মিশে যায় এই মেডিসিন সেসময় তাদের এদিকে খেয়াল ছিল না। অবশ্য যারা নাড়ু খেয়েছে তারা পুরোপুরি মাতলামি করেনি, মাতলামির অনুভব হয়েছিল অর্থাৎ ২০℅ মেডিসিন খুঁজে পায় পুলিশ। বিনাদোষে আর কদিন হাসান শাস্তি পাবে, আসলে কি হাসান এই জঘন্য কাজ করেছে? আইন বাঁচে প্রমাণের উপর। প্রায় সাত মাস পরে পুলিশ অফিসার সাইফুল ইসলামের নির্দেশে হাসানকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে অনিকের সাথে হাসানের মধু মাখানো বন্ধুত্ব নাই। তার মানে এখান থেকে বুঝতে পারা যায় সিগারেটের মোথার আগুন কাপড়ে লাগে, কাপড়ের আগুন ম্যাচে লাগে এভাবে আগুনের বলকের দেখা মিলেছিল। এটি সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। তাহলে একটি সিগারেটের তাপের কারণে এসব। হয়তো তাজুলের সাথেও এমন ঘটতে পারে। সব মানুষরই শত্রু থাকে, আর যার শত্রু থাকেনা সে লড়াই করা শিখবে কিভাবে?

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102