রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন

দেখার কেউ নেই— মধ্যনগর সীমান্তে অবৈধ গরুর চোরাকারবারী বৈধতা দিচ্ছে ইজারাদার

Coder Boss
  • Update Time : শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৮৬ Time View

 

সাইফ উল্লাহ, স্টাফ রিপোর্টার:

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর সীমান্তে দিয়ে অবৈধ ভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে গরু ও মহিষ, ইয়াবা, মদ, গাঁজা, বিড়ি, গরু, থান কাপড়সহ ভারতীয় বিভিন্ন চোরাইপণ্য। এই সীমান্ত এলাকা এখন চোরাকাবারিদের নিরাপদ রুট হিসেবে পরিণত হয়েছে। আর এদিকে সীমান্ত দিয়ে আসা এসব অবৈধ গরু ও মহিষের বৈধতা দিচ্ছে উপজেলার এক মাত্র পশুর হাট মহিষখলা বাজারের ইজারাদাররা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সীমান্তে চোরাকারবারিরা প্রতিদিন প্রতিযোগীতামূলক ভাবে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে বাংলাদেশে আনছে গরু—মহিষ মহিষখলা বাজারের ইজারদারের নিকট থেকে গরু প্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা ও প্রতিটি মহিষের জন্য দুই হাজার টাকা দিয়ে গবাদিপশু ক্রয় বিক্রয়ের হাসিল রশিদ সংগ্রহ করলেই এসব গরু মহিষ বৈধতা পায়। আর এই হাসিল রশিদের বলেই ভারতীয় গরু—মহিষ বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমের পাঠিয়ে দেয়া হয় পাশের বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নে অনুমোদন বিহীন গবাদিপশুর হাট দাতিয়াপাড়া নতুন বাজার ও ধর্মপাশা বাজার, বারহাট্টা উপজেলার নৈহাটী বাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, উপজেলার উত্তর বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের আন্তরপুর গ্রাম, মহেষখলা, কাইটাকোনা, কড়ইবাড়ী, গুলগাঁও, রূপনগর ও কান্দাপাড়া, বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া গ্রামের কয়েকটি সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র ওসি সজীব রহমানকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
মধ্যনগর থানার ওসি মো. সজীব রহমানের নিয়োজিত ল্যাইনম্যান বংশিকুন্ডা উওর ইউনিয়নের সাউথ পাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য সাত্তারের ছেলে সাদ্দাম হোসেন ওসি সবীজ রহমানের নামে চোরা কারবারিদের থেকে ভারতীয় গরু প্রতি ৪শ’ টাকা ও মহিষ প্রতি ৭০০শ’ত টাকা করে বখরা আদায় করে থাকেন। চোরাইপথে আনা চিনির প্রতি বস্তা প্রতি ১০০শ’ টাকা আদায় করেন । সুপারির বস্তা প্রতি ১শত করেন টাকা করে বখরা আদায় করে থাকেন।
ওসির সজীব রহমানের নিয়োজিত ল্যাইনম্যান সাদ্দাম হোসেন প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার ওসি সজীব রহমানের নামে বখরা আদায়ের টাকা উত্তোলন করে প্রতি বুধবার ওসি সজীব রহমানকে দিয়ে আসেন। ওসি সজীব রহমান গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে মধ্যনগর থানায় যোগদানের পর আগের চেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। ওসির নিয়জিত লাইনম্যান সাদ্দাম হোসেন আত্যাচারে সাধারন মানুষ অতিষ্ঠ।
উল্লেখ্য, গত ২১ শে অক্টোবর২০২৪ সালে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নামে কিন্তু রহস্যজনক কারণে ওসি মো, সজীব রহমানের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায়। সীমান্ত এলাকা এখন আগের চেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চোরাকারবারি জনান, ওসি সজীব রহমানের নিয়োজিত লাইনম্যান সাদ্দাম হোসেন আমাদের কাছ থেকে ওসি স্যারের কথা বলে প্রতি গরু ৪শ’ত টাকা ও সুপারি বস্তা ১ শ’ত টাকা, চিনির বস্তা ১শ’ত টাকা নেয়। টাকা না দিলে আমাদের মালামাল আটক করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। তাই বাধ্য হয়ে তাকে টাকা দিতে হয়। আমার ভারতী গরু মহেষখলা বাজারে হাসিল রশিদ নিয়ে গরু বিভন্ন বাজারে বিক্রিকরি।
উপজেলার আশিক মিয়া বলেন, বর্তমানে চোরাইপথে ব্যাপক হারে ভারতীয় গরু আনা হচ্ছে। আনুমানিক পাঁচশতাধিক চোরাকারবারি এতে জড়িত আছে। অবৈধ এসব ভারতীয় পশু সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদশে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মহিষখলা বাজারের গরু হাটের হাসিল রশিদ পেয়ে যান চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। আবার অনেক সময় ভারতীয় গরু এনে দাতিয়াপাড়া গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে রাখা হয়। এরপর মহিষখলা বাজারের গরুর হাটের হাসিল রশিদ সংগ্রহ করেন চোরাকারবারিরা। ওই হাসিল রশিদের বলে গরু বাজারে তুলে কেনাবেচার মাধ্যমে এর বৈধতা পেয়ে যান চোরাই গরু সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা। আর এই কাজটি নিয়ন্ত্রণ করেন মহিষখলা বাজারের ইজারাদার সিণ্ডিকেট।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মধ্যনগর উপজেলা প্রশাসনের হাটবাজার ব্যাবস্থাপনা কমিটি টেন্ডারের মাধ্যমে মহিষখলা বাজারটি ১৪৩২ বাংলা ১বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত একসনা ইজারা প্রদান করেছে। দরদাতা হিসেবে চামরদানী ইউনিয়নের দুগনুই গ্রামের বাসিন্দা এম এ শহীদ মহিষখলা বাজারটি ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকায় ইজারা পান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মধ্যনগর উপজেলার বিএনপির একাধিক নেতা জানান, মহিষখলা বাজারের গবাদিপশুর হাটকে কেন্দ্র করেই মূলত চোরাকারবারি চক্রটি সক্রিয় রয়েছে। গরু ও মহিষ চোরাকারবারের সাথে মহিষখলা বাজার ইজারাদার সিন্ডিকেট জড়িত। তারা আরও বলেন, মহিষখলা বাজারের ইজারদার সিন্ডিকেট সদস্যরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী তাই এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চায় না। যেভাবে প্রতি রাতে সীমান্তে গরু, মহিষ, মদ, গাঁজা ও ইয়াবা চিনি, কসমেটিক, আসছে, তাতে এলাকার যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে চলে যাবে। তারা আরো জানান, থানার ওসি সাহেব ভাগ ভাটোয়ারা পাচ্ছেন। বিদায় প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংবাদ কর্মী বলেন, মহিষখলা বাজার উপজেলার একমাত্র বাজার, যেখানে গবাদিপশুর হাটের অনুমোদন রয়েছে।
তাই মহিষখলা বাজারের ইজারদার যদি অবৈধ পথে আনা ভারতীয় গরু মহিষের হাসিল রশিদ না দেন, তাহলে সীমান্তের গরু মহিষ চোরাকারবারিরা অবৈধ এ ব্যবসা করতে পারবেনা। এতে করে মধ্যনগর সীমান্তের চোরাকারবার একেবারেই বন্ধ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মহিষখলা বাজারের ইজারদার সিন্ডিকেট গবাদিপশুর বেচা—কেনার রশিদ ও হাসিলের মাধ্যমে ভারতীয় গরুর বৈধতা দিয়ে আয় করেন বিপুল পরিমান টাকা। পাশাপাশি মধ্যনগর থানার পুলিশ ভাগ ভাটোয়ারা পাচ্ছেন তাই
এটি এখন ওপেন সিক্রেট।
থানার লাইনম্যান সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি ওসি স্যারের নামে টাকা তুলে সেই টাকা প্রতি বুধবার ওসি স্যারকে দিয়ে আসি।

এ বিষয়ে মহিষখলা বাজারের ইজারাদার চামরদানী ইউনিয়নের দুগনুই গ্রামের বাসিন্দা এম এ শহীদেরর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলো কল রিসিভ না করা বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে মহিষখলা বাজার ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি (পদাধিকার বলে) বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরনবী তালুকদারের সাথে মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মো. সজীব রহমান বলেন, চোরাচালান বন্ধে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। থানায় জনবল কম আর এখানে যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুব খারাপ, তবুও গরু—মহিষসহ সকল চোরাকারবারিদের তৎপরতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায় বলেন, মধ্যরগর সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে ভারতীয় গরু সহ বিভিন্ন পণ্য আসে সেটি আমার জানা আছে।
তবে মহিষখলা বাজার থেকে রশিদ নিয়ে অবৈধ গরু, মহিষের বৈধতা দিচ্ছে কিনা সেটি আমার জানা নেই তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি’ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, উর্ধ্বতন সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা সর্বোতভাবে অব্যাহত রয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদ বলেন,
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকে তা তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102