খুলনা অফিস:
একটি আঘাত শুকাতে
না শুকাতে আরেকটি আঘাত এসে যায়।
আমি শুক্রবার হলে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকি। দুটি সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে অতিথি ছিলাম তাই বিকাল থেকে ফোনটা হাতে নেওয়ার সময় হয়ে ওঠেনি । রাত ১১ টার পরে বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হলাম।হঠাৎ ফোনটা দেখার সময় মামুন রেজার একটি পোস্টে আমি লাভ রিয়েক্ট দিয়েছি। লেখাটা পড়া হয়নি কারণ বাবুল হাওলাদারের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহের মধ্যে খুলনার টিভি সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন মত বিনিময় হয়ে থাকে তাই ভালোবাসার স্থান থেকে ভালোবাসার মানুষদের লাভ রিয়েক্ট দিয়েছি, একটু নিচে নামতেই আরো অসংখ্য পোস্ট সামনে চলে আসে মামুন রেজার ছবি। তখন ব্যস্ততায় শরীর ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও লেখাটি পড়লাম। সাথে সাথে মনে হল চারিদিকে যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল।হঠাৎ করে হাসান ভাইয়ের পোস্টটি দেখতে পেলাম। জাতিসংঘ পার্কে রাত ১২টার পরে জানাজা হবে ।বাসা থেকে আবারো কাউকে কিছু না বলে প্যান্ট শার্ট পরে মোবাইল হাতে নিয়ে দৌড় দিলাম।সঙ্গে কোন টাকা পয়সাও ছিল না ।ওনাকে শেষবারের মত দেখার জন্য জাতিসংঘ পার্কের ভিতর গিয়েছি তখন রাত ১২ঃ৩৬ মিনিট। ওখানে গেলে খুলনার অসংখ্য ভক্তরা দাড়িয়ে ছিলেন সবাই ছুটে এসেছে শেষ দেখা করার জন্য। আমি যাওয়ার অল্প সময় আগেই তাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় তার বাসবভনে ।শুনলাম ওখান থেকে প্রেস ক্লাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবে শেষবারের মতো দেখতে আবার ছুটলাম প্রেসক্লাবে। ওখানে গিয়ে দেখি শত শত মানুষ ভিড় জমানো। তার মধ্যে আমার প্রিয় মানুষদের কাছে তার মৃত্যুর সম্পর্কে জানতে চাইলাম। মামুন রাজার সম্পর্কে যমুনা টিভির খুলনার প্রধান প্রবীর বিশ্বাস দাদা বলেন আমার চেয়েও অনেক ছোট তাকে এভাবে হারিয়ে ফেলবো এটা ভাবতেও পারছি না।দাদা অনেক কষ্ট পেয়েছে তার একজন সহযোদ্ধাকে হারিয়ে। তার অল্প সময় পরে মামুন রেজার কফিন নিয়ে একটি গাড়ি আসলো। তখন সকলের চোখের জলে শেষবারের মতো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায় বিভিন্ন মহলের ভক্তবৃন্দরা। তিনি খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তাই প্রেসক্লাবের কোন সদস্যরা ছুটে এসেছিলেন বিদায় জানাতে। হায়রে মৃত্যু !!! ২০জুন সকালে সিঙ্গাপুর থেকে স্বপরিবারে ভ্রমণ শেষে খুলনা নিজ বাসভবনে ফিরে।রাতে নিজের অফিসে নিউজ 24, ও সমকাল অফিসেও গিয়েছিল। রাত ৯টায় বাসায় ফিরে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে ঔষধ খাবার পরও বুকে ব্যাথা উঠে।সঙ্গে সঙ্গে সে পড়ে যায়,তাৎক্ষণিক খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শুক্রবার (২০ জুন) রাত পৌনে ১০টায় খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। সাংবাদিকতা, সততা ও মানবিকতায় যার নাম ছিল সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত, সেই মানুষটি হঠাৎ করে চলে যাওয়ায় পুরো খুলনা সাংবাদিক সমাজ নিস্তব্ধ।মানুষকে হারিয়ে কাঁদছে সবাই শুধুমাত্র একজন মানুষের জন্য তাহলে বুঝতে পারছেন ভালো মানুষের জন্য সবাই কাঁদে। আমাকে যেখানেই দেখতো আমাকে বলতো দাদা কেমন আছেন, আপনার খুলনা আর্ট একাডেমির নতুন জায়গায় একটু যাবো সময় করে আর হলো না। আর আসা হলোনা। লেখার অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছি। একটু পরেই প্রেস ক্লাবে নিয়ে আসলো সবাই কফিনের উপরে পায়ের দিকে হাত দিয়ে আদর্শ এই মহান সাংবাদিককে স্যালুট জানাই।
তার ছোট একটা বাবু খুলনা জিলা স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে।তাকে রেখে চলে গেলেন যে বাবু ঘুমের ঘরে বাবা বলে ডাকবে!!তাকে কে শান্তনা দিবে!!হে সৃষ্টিকর্তা তুমি এই শিশুকে কেন বাবা হারা করলে।
প্রেসক্লাব থেকে গাড়িতে তুলে দিলাম খুলনা দিগলিয়ায় তার নিজ জন্মস্থানে নিয়ে গেলেন। তারপর প্রেসক্লাব থেকে একা একা হাঁটতে হাঁটতে ইকবাল নগর খুলনা আর্ট একাডেমিতে ফিরলাম প্রিয় ভাইকে বিদায় জানিয়ে। হায়রে মানব জীবন এমন করে অকালে চলে যেতে হয় !!!
বিদায় মামুন ভাই, সাংবাদিকতার আকাশে আপনি চিরকাল উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবেন।