নিজস্ব প্রতিবেদক
যেসব ব্যক্তির হৃদয় মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, মসজিদ নির্মাণ করে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনেন, নামাজ প্রতিষ্ঠা করেন, যাকাত প্রদান করেন এবং তারাই আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করেন না। তাদেরই সঠিক পথপ্রাপ্ত হবার আশা করা যায় ।
মসজিদ হলো শিক্ষা ও নৈতিকতার কেন্দ্র:
মসজিদে কুরআন শিক্ষা, হাদীস চর্চা, শিশুদের দ্বীনি শিক্ষা এবং নৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়। শুধু তাই নয়, মসজিদ মানুষকে গুনাহ থেকে দূরে রাখে, মসজিদ কেন্দ্রিক জীবন- ব্যক্তি ও সমাজকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। মসজিদে নামাজ আদায়কারী কে সকল পাপ থেকে বিরত রাখে।
মহান আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্টির লাভে ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কল্যাণার্থে, ময়মনসিংহ জেলার অধীনস্থ সদর উপজেলার অধীনে, শষ্যমালা (পশ্চিম পাড়ায়) জে এল নং ১০৯, শষ্যমালা মৌজার বসবাসকারী মরহুম মোহাম্মদ আলী, মরহুম রজব আলী, মরহুম হযরত আলী এবং মরহুম আব্বাস আলী, পিতা- মরহুম ওমর আলী, এই চার ভাই মিলে আর ও আর দাগ নং ২৪৭ খতিয়ান নং ২৫১ মূলে ০৯ শতাংশ জমি মসজিদ নির্মাণের জন্য অকফা করে দেন।
বর্তমান “শষ্যমালা মধ্যপাড়া জামে মসজিদ ” নামে বিআরএস রেকর্ড জরিপ হয়েছে, যার বিআরএস দাগ নং ২৬৯, খতিয়ান নং ৭২৮। উক্ত অকফাকৃত জমিতে ১৯৫৮ সালে টিনের চাল ও টিনের বেড়া দিয়ে ছোট আকারে শষ্যমালা মধ্যপাড়া জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
পরবর্তীতে ১৩’×৩০’ পরিমাপের একতলা বিশিষ্ট (পাকা দালান) সাধারণ একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন উক্ত মসজিদে নামাজ আদায় করেন স্থানীয় এলাকাবাসী । সমাজে জনবল বৃদ্ধি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নামাজের জায়গা সংকলন না হওয়ায় জমির দাতা সদস্যদের নাতিন, মোঃ জয়নাল আবেদীন তার একমাত্র পুত্রের কবরের পাশে তিন তলা বিশিষ্ট প্রায় ২০০০ বর্গফুট আয়তনের ১ম তলার কাজ সমাপ্ত করেন।
গত ২৯/৮/২০২০ তারিখে, দারুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসার সম্মানিত , প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহবুবুল করীমের জিম্বাদারি বা সভাপতিত্বে এবং স্থানীয় ১৩ টি মসজিদের ইমামসহ মোট ৪৮ জন সম্মানিত মুসলিমদের মতামত গ্রহণের জন্য মসজিদের নতুন নামকরণের জন্য আলোচনা সভা হয় এবং কুরআন-সুন্নাহ আলোকে উক্ত সভায় ৫ টি নাম উপস্থাপন করা হয়, যথাক্রমে : (ক) বায়তুল নূর জামে মসজিদ (খ) বায়তুল আমান জামে মসজিদ (গ) বায়তুল মামুন জামে মসজিদ (ঘ) বায়তুল মালেক জামে মসজিদ এবং (ঙ) বায়তুল হেরা জামে মসজিদ।
এই পাঁচটি নাম হতে মাওলানা মাহবুবুল করীম কর্তৃক “বায়তুল মামুন জামে মসজিদ” নাম করণের জন্য আলোচনা সভায় উপস্থাপন করলে সকলের মতামতের ভিত্তিতে সর্বসম্মতি ক্রমে বৈধ রেজুলেশন এর মাধ্যমে মসজিদে নামকরণ করা হয়” বায়তুল মামুন জামে মসজিদ” ।
মসজিদ নির্মাণে আর্থিক জোগানের বিবরণঃ মোট ব্যয়ের আনুমানিক তিন ভাগের এক অংশ স্থানীয় সমাজের লোকজনের নিকট হতে সংগ্রহ হয়েছে, এক ভাগ মোঃ জয়নাল আবেদীন কর্তৃক সমাজের বাহিরে আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের নিকট থেকে কালেকশন ও কিছু সরকারি অনুদান এবং অবশিষ্ট এক ভাগ মোঃ জয়নাল আবেদীনের পরিবার থেকে অনুদান হিসেবে প্রদান করেছেন।
উক্ত মসজিদে নামাজ পড়াইতেন মুন্সী মরহুম আব্দুর রহমান ( উনি কোন হাফেজ বা আলেম ছিলেন না) তৎকালীন ইমামকে সম্মানী প্রদান করা হতো ধানের মৌসুমে ধান প্রদানের মাধ্যমে । এখানে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালে মসজিদ পুনঃনির্মাণকালে উক্ত মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন মুন্সি আব্দুর রহমানের বড় ছেলে মরহুম আব্দুল জব্বার । ঐ সময় মরহুম আঃ জব্বার নিজ ইচ্ছায় রাজনৈতিক (আওয়ামী লীগ) বিশেষ ক্ষমতা বল প্রয়োগে মসজিদের নামকরণ করেন আব্দুর রহমান মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদ ( কোন প্রকার রেজুলেশন বা জনগণের মতামত ব্যতীত)। জমি দাতা সদস্যদের পক্ষ থেকে জনাব মোঃ জয়নাল আবেদীন নির্মাণ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং নির্মাণ কাজ শুরু করার সময় সাবেক সভাপতি জনাব মরহুম আব্দুল জব্বার এর নিকট জানতে চেয়েছে যে, মসজিদের নাম আব্দুর রহমান মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদ কিভাবে হলো এর পক্ষে যে সমস্ত কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট আছে তা সকলের অবগতির জন্য উপস্থাপন করার জন্য অনুরোধ করলে সাবেক সভাপতি মরহুম আব্দুল জব্বার সাহেব আব্দুর রহমান মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদের নাম করণের পক্ষে কোন প্রকার কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়ে নিজ ইচ্ছায় স্বজ্ঞানে সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করেন।
সাবেক সভাপতি মসজিদ নির্মাণ কাজে কোন প্রকার আর্থিক বা শারীরিক সহযোগিতা না করে সর্বদা মসজিদ নির্মাণ কাজে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করেন। ইহাতে নির্মাণ কাজে বিভিন্ন ধরণের বিঘ্ন সৃষ্টি ঘটেছে। বিভিন্ন বাধা ও সমস্যা অতিক্রম করে মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ করেন প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃপক্ষ এবং তখন থেকেই মসজিদের নাম নিয়ে সমাজের লোকজন দুই দলে বিভক্ত হয়।
একদল বলেন যে আব্দুর রহমান মুন্সী যেহেতু দীর্ঘদিন মসজিদের ইমামতি করেছেন সেহেতু তার নামে মসজিদের নামকরণ বলবৎ থাকবে এবং বায়তুল মামুন জামে মসজিদ এই নামটি মোঃ জয়নাল আবেদীনের ছেলের নামে নাম করণ, সেহেতু এই নামটি পরিবর্তন করে আব্দুর রহমান মুন্সি বাড়ি জামে মসজিদ করার জন্য পাঁয়তারা করেন। অপর আরেক একদল বলেন যে, নামাজ পড়িয়েছে ধান বা হাদিয়া নিয়েছে এবং মসজিদ নির্মাণ করার সময় মুন্সি আব্দুর রহমানের পরিবারটি নির্মাণ কাজে কোন প্রকার সহযোগিতা করে নাই অতএব মসজিদের নাম কোন ব্যক্তির নামে হতে পারে না। সমাজের সকলের গ্রহণযোগ্য হবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরআন ও সুন্নাহ্ মোতাবেক নামকরণ করা হবে ।
এভাবেই গ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ উক্ত মসজিদের নামাজ আদায় করে আসিতেছে হঠাৎ গত ১৯ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে মুন্সি মরহুম আব্দুর রহমানের নাতি মোঃ সেকান্দর আলী আকন্দ সাবেক সভাপতি মরহুম আব্দুল জব্বার এর ছেলে নেতৃত্বে মোঃ হাতেম আলী পিতা মৃত আকবর আলী কর্তৃক মসজিদের নাম কালি দিয়ে দেওয়ালে আব্দুর রহমান মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদ লিখেন এবং অপরদল কর্তৃক তা মুছে ফেলা হয় । পরবর্তিতে সমাজে কোন্দল সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষিতে আব্দুর রহমান মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদের পক্ষে নেতৃত্ব প্রদান করেন মোঃ সেকন্দর আলী (যিনি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব ইকরামুল হক টিটুর ডান হাত ছিলেন) এর নেতৃত্বে সমাজকে দুই ভাগে বিভক্ত করেন এবং তার দলকে মসজিদে নামাজ পড়তে বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করায় ঐ দল মসজিদে নামাজ আদায় থেকে বিরত থাকেন। একপর্যায়ে স্থানীয় আলেমদের চেষ্টায় এবং বৃহত্তম ময়মনসিংহের শ্রেষ্ঠতম সিনিয়র মাওলানা আব্দুর রহমান হাফেজী হুজুর ( প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মাকযানুল উলুম মাদ্রাসা, তালতলা, খাগডহর, ময়মনসিংহ) দিকনির্দেশনায় দুইদলের নির্ধারিত নাম বাদ দিয়ে নতুন করে মসজিদের নামকরণ করেন “বায়তুল তাক্বওয়া জামে মসজিদ” শষ্যমালা পশ্চিমপাড়া, সদর, ময়মনসিংহ। উক্ত সিদ্ধান্ত তৎক্ষণিক উভয় দল মেনে নিলেও পরবর্তীতে মোঃ সেকান্দর আলী অর্থাৎ আব্দুর রহমান মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদের পক্ষের দল সিদ্ধান্তটি প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় বিভিন্ন তৎপরতা চালায় আব্দুর রহমান মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদ নামকরণ করার জন্য।
এক পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যথা বৃহত্তম ময়মনসিংহের বিএনপির সম্মানিত সদস্য সচিব রুকনুজ্জামান সরকার রুকুন এর নেতৃত্বে ইউনাইটেড কলেজের প্রিন্সিপাল ও উত্তরদাপুনিয়া হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ স্থানীয় ০৬ জন মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কে নিয়ে এবং উভয় দলের সম্মতিক্রমে মসজিদের নাম পুনরায় নির্ধারণ করেন “মাসজিদুত তাক্বওয়া” । ( উভয় দলের স্বাক্ষরসহ মোট ২৫ জনের স্বাক্ষর রয়েছে) এই সমাধানের ০২ দিন পর থেকে পুনরায় আব্দুর রহমান মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদ নামকরণের জন্য আদা জল খেয়ে তৎপরতায় চালায় এবং একপর্যায়ে জমি দাতা সদস্য পরিবারের নাতিন জনাব মোঃ সিরাজুল ইসলাম ( বর্তমানে এসপি’ ষ্টেনু-১ হিসেবে ময়মনসিংহে এসপি অফিসে কর্মরত) এর বিরুদ্ধে ডিআই জি ডিসি এবং এসপি বরাবর হয়রানির উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করেন, যা ময়মনসিংহ সদর কোতোয়ালি থানা কর্তৃক তদন্ত করে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
অপর দল মসজিদের নাম মসজিদুত তাক্বওয়া বলবত রাখেন বিধায় আব্দুর রহমান মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদ এই নামের পক্ষের দল কর্তৃক পুনরায় ময়মনসিংহের স্থানীয় “শ্বাশত সংবাদ” পত্রিকার মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। এই প্রতিনিধির কাছে এলাকার ধর্মপ্রাণ জনগণ বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর, অতএব এই আল্লাহর ঘর নিয়ে মিথ্যা প্ররোচনা, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে হয়রানি করা মোটেও কাম্য নয়। বর্তমানে মসজিদের নাম টি প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য হয়েছে আশা করা যায় অপরদিকে মসজিদের ব্যক্তিগত না হওয়াই উচিত। কারন গ্রামের মসজিদ যেহেতু সমাজে অনেক পরিবার বসবাস করে থাকেন, সেহেতু এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন ব্যক্তির নামে মসজিদের নামকরণ হলে অন্যান্য পরিবার এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে এবং অসন্তুষ্ট প্রকাশ করতে পারে বিধায় বিষয়টি দৃষ্টি কঠোর পরিলক্ষিত হওযায় মসজিদের নাম আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন ও সুন্নাহ আলোকে নাম করণ উত্তম বলে আমরা মনে করি। এই বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা যেন উভয় দলকে হেদায়েত দান করেন।