নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক সুপারভাইজার মোঃ মওদুদ আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনৈতিক আচরণ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি হুমকি ও অর্থ আদায়ের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগে শিক্ষক সমাজ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত ও প্রশাসনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
সম্প্রতি ইসলামিক ফাউন্ডেশন খুলনা বিভাগীয় অফিসের রদবদলের অংশ হিসেবে মওদুদ আহমেদকে বটিয়াঘাটা থেকে দাকোপ উপজেলায় বদলি করা হয়। বদলির পর পরই উঠে আসে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দায়িত্ব পালনকালে মওদুদ আহমেদ নিয়মিতভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে বাজার-সদাই, জামাকাপড়, মোটরসাইকেলের পেট্রোল, এমনকি ইলিশ-চিংড়ি মাছও দাবি করতেন। কেউ এসব দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁদের বেতন বন্ধের হুমকি দিতেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা।
আরও জানা গেছে, তিনি বটিয়াঘাটা উপজেলার লবণচোরা সৈয়দবাড়ি এলাকায় জমি ক্রয় করে এক শিক্ষককে দিয়ে জমি ভরাট করান এবং সেই শিক্ষকের প্রায় ৫০ হাজার টাকা এখনো বকেয়া রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এভাবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অস্বচ্ছ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ৫ আগস্টের পর কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন যে, মওদুদ আহমেদ নিজেকে একটি রাজনৈতিক দলের (জামায়াত সংশ্লিষ্টতা দাবি করে) প্রভাবশালী হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করেন। শিক্ষক সমাজ বলছেন, এটা শুধু প্রশাসনিক নয়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।এর আগেও মওদুদ আহমেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপজেলায় দায়িত্বপালনকালে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। বাগেরহাটের ফকিরহাটে এক শিক্ষিকার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে তাঁকে বদলি করা হয়। এছাড়া যশোরে দায়িত্বকালীন সময়ে ৫২ হাজার টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
একাধিক শিক্ষক জানান, সুপারভাইজার মওদুদ বলতেন:
“আমার হাতের মুঠোয় জেলা অফিসের সবাই,কেউ আমার কিছু করতে পারবে না।”এই বক্তব্যে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং বাধ্য হয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।অভিযোগে রয়েছে, বিভিন্ন উপজেলায় তিনি একই কায়দায় শিক্ষকদের কাছ থেকে আর্থিক, ব্যক্তিগত ও সামাজিক সুবিধা আদায় করে আসছেন।
২০১৮ সালে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা গ্রামের রেশমা খাতুন নামের এক শিক্ষিকার সঙ্গে তাঁর অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি স্থানীয় জনগণের হাতে ধরা পড়লে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন বলে জানা যায়।এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“অভিযোগগুলো আমরা পেয়েছি এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। যথাযথ প্রমাণ পাওয়া গেলে বিভাগীয় ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শিক্ষক ও এলাকাবাসীর দাবি:সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে, তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত ও দুর্নীতির দায়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক। তাঁরা একইসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শিক্ষক শিক্ষিকা ও সাধারণ মানুষের আকুতি:”সব অভিযোগ জেনেও যদি এমন কর্মকর্তারা বারবার নতুন উপজেলায় বদলি হয়ে একই অপরাধ করতে পারেন, তাহলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাবমূর্তি ও দেশের নৈতিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর এর প্রভাব মারাত্মক হবে।”
এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছে খুলনার শিক্ষক সমাজ ও সাধারণ জনগণ।