রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া প্রেসক্লাব এর অফিস উদ্বোধন মাটি – মা প্রফেসর ডক্টর সন্দীপক মল্লিক সাহিত্য রসগ্রহণ অনুষ্ঠানে নতুনতারা’র প্রতিষ্ঠাতা সংবর্ধিত সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি দ্বীপশিখা পদক পেলেন জগন্নাথপুরের কৃতি সন্তান শাহিনুর রহমান কারো কাছে নিজের সমস্যা বলার আগেই ভাবুন গঙ্গা–পদ্মার ন্যায্য হিস্যা দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশাল গণসমাবেশ হাওরাঞ্চলের উন্নয়নে ধানের শীষে ভোট চান আনিসুল হক ট্রাভেল এজেন্সির প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ-২০২৫ বাতিলের দাবি, আটাব, বায়রা ও হাবের মানসিক চাপদাতা: জীবন্ত লাশ বানানোর ভয়ঙ্কর হত্যাকারী সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে জনগণের আমানতের খেয়ানত হবেনা- এডভোকেট ইয়াসীন খান সিডর আঘাতের ১৮ বছর, ভেড়িবাঁধের অভাবে আজও দুর্ভোগে, ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ও বেড়িবাঁধের দাবি

পুলিশ কবে আমজনতার বন্ধু হবে ?

Coder Boss
  • Update Time : শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১০০ Time View

এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী

বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলোর আমলে দলীয় বলয়ের মধ্যে থাকায় পুলিশ ‘জনবান্ধব’ হয়ে উঠতে পারেনি। ক্ষমতাসীন দলগুলো মাঠ পর্যায়ে কাজ করা এই বাহিনীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। বছরের পর বছর ধরে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা পুলিশ বাহিনীকে সবশেষ জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে জনমানুষের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। আইনের প্রতি আনুগত্য ও নিরপেক্ষ থাকার শপথ নেওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি দলীয় প্রভাবের কারণে গুলি করে হত্যা করেছে শত-শত ছাত্র-জনতাকে। এ কারণে সাধারণ মানুষের আক্রোশের শিকার হয়েছে পুলিশ নিজেও। পুলিশ দেখলেই ওসি প্রদীপ কুমাররের ছবি ভেসে উঠে ।
বাংলা ও বাঙালি আন্দোলনপ্রিয় জাতি। আন্দোলনের ঠেলায় ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল নয়াদিল্লি, যা সুলতানি ও মোগল আমলের রাজধানীর লাগোয়া।
১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগ হলেও আন্দোলনের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। আমরা পূর্ববঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তান পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছি।
আন্দোলন মানেই রাস্তা আটকে মিছিল, ভাঙচুর, মারামারি। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায় পুলিশের। তো পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের হাতাহাতি-মারামারি হয়। ছোড়া হয় ইটপাটকেল। পুলিশ তো পিটুনিতে প্রশিক্ষণ পাওয়া বাহিনী। তারা চড়াও হয়। আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এটা নৈমিত্তিক দৃশ্য। পুলিশকে লক্ষ করে কলকাতার আন্দোলনকারীরা একটা স্লোগান তৈরি করে। সেটি বেশ জনপ্রিয় হয়। সবার মুখে মুখে স্লোগান ছিল, ‘পুলিশ তুমি যতই মারো, মাইনে তোমার একশ বারো’।
সেই স্লোগান কলকাতা থেকে সীমানা পেরিয়ে চলে এসেছে ঢাকায়। কয়েক বছর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মুখে এ স্লোগান শোনা গেছে। সেই সঙ্গে ছিল পুলিশকে নিয়ে খিস্তি। স্লোগানেরও ‘শানে নজুল’ থাকে। এই স্লোগানের অর্থ হলো আমাদের যতই পেটাও, তোমাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। তোমার বেতন তো বাড়বে না। তোমার লাঠি-বন্দুকের ওপর ভর করে রাজনীতির সিন্ডিকেটগুলো একের পর এক দেশের দখল নেবে। তুমি যা আছ, তা-ই থাকবে। এর পেছনে একটা বার্তা হলো ‘পুলিশ, তুমি সরকারের লাঠিয়াল হয়ো না।’
আমাদের এই স্বাধীন দেশে পাঁচ দশক ধরে লক্ষ করছি, পুলিশ অপরাধী ধরার চেয়ে ভিন্নমতের লোকদের ওপর জুলুম করাটাই প্রধান কাজ মনে করে। এ জন্য কি পুলিশ দায়ী? মোটেই তা নয়। যারা দেশ চালায়, সেসব ধূর্ত রাজনীতিবিদেরা গোষ্ঠীগত ক্ষমতা বজায় রাখতে পুলিশকে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করে।
চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি, ক্ষমতাসীনেরা জনগণকে পাশে পায়নি। প্রথমে তারা নির্ভর করেছে দলীয় লাঠিয়ালদের ওপর। আমরা হেলমেট বাহিনী দেখেছি। তারা পুলিশ প্রটেকশনে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে। পরে তো পুলিশ নিজেই হেলমেট বাহিনীর জায়গা নিয়েছে।
চব্বিশের জুলাইয়ে লাঠিয়াল পুলিশ আসমান ফুঁড়ে আসেনি। পাঁচ দশক ধরেই দেখা গেছে এ দৃশ্য। যে পুলিশ সাদেক হোসেন খোকাকে রক্তাক্ত করেছে, সেই একই পুলিশ মতিয়া চৌধুরীকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। যখন যে ক্ষমতায়, পুলিশকে তারা লাঠিয়ালের মতো ব্যবহার করেছে। এ অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পাব কীভাবে?
গত শনিবার ঢাকায় ‘পুলিশ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা: নাগরিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, যখন যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে কাজে লাগিয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের অনেক সদস্য রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়েছেন।
এ রকম একটি পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে স্বাধীন বা স্বায়ত্তশাসিত পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বৈঠকে পুলিশের বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলম বলেছেন, জনমুখী পুলিশ করতে চাইলে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা দিতে হবে। পুলিশকে মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে। পুলিশ একটি স্বাধীন সংস্থার কাছে থাকুক।
তিনি আরও বলেছেন, মামলায় কাকে গ্রেপ্তার করা হবে, কার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে—সেটা যেন কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাপিয়ে দিতে না পারে, এটাই পুলিশ চায়।পুলিশ কি জনস্বার্থে কাজ করার সক্ষমতা রাখে না? অবশ্যই রাখে। এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হলো রাজধানীর আদাবর ১০-এ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রধান আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘বেলচা’ মনিরসহ পাঁচজনের গ্রেপ্তার হওয়া। একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশ দ্রুত এ অভিযানে নামে। তার মানে পুলিশকে কাজ করতে দিলে তারা সেটি করতে পারে। প্রশ্ন হলো, আমরা তাদের দিয়ে কী কাজ করাব, কীভাবে করাব।
পুলিশের কাজ হলো অপরাধের সন্ধান পেলে অপরাধীকে ধরে তদন্ত করে বিচারের জন্য আদালতে সোপর্দ করা। আদালত কি সেটা করেন? আদালতে ন্যায়বিচার নেই, এটা তো অনেক পুরোনো অভিযোগ। কিন্তু ভুক্তভোগী মানুষ দায়ী করে পুলিশকে। আমাদের দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই অধিকাংশ নাগরিকের।
আমাদের দেশে পুলিশ বাহিনীর সদস্য ২ লাখ ১৩ হাজার। এর মধ্যে কনস্টেবলের সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার। পুলিশের প্রধান কাজ, অর্থাৎ তদন্ত করে অপরাধী শনাক্ত করার বিষয়ে কনস্টেবলদের সম্পৃক্ত করা হয় না। তাদের ব্যবহার করা হয় ‘ফোর্স’ হিসেবে, ভিন্নমত ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের লোকদের দমনের কাজে। কর্মশক্তির এ অপচয় ও অপব্যবহার চলে আসছে দশকের পর দশক। এ দেশের জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে মেধার স্বীকৃতি নেই।
পাকিস্তান আমলে পুলিশ সার্ভিসে নিয়োগ পেতেন বড়জোর ২০ জন। বাংলাদেশ হওয়ার পর আমরা শুরুতেই দেখলাম, কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই শত শত লোক রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান। এখন প্রতিবছরই আমরা শত শত লোককে বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পেতে দেখি।
দেশে এত মেধাবী? ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। মেধার ভিত্তিতে যে উঠতে পারবে না, সে উঁচু পদে প্রমোশন পেয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এর মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীতে দলবাজি প্রশ্রয় পেয়েছে। আইজিপি বাহারুল আলম মনে হয় সে কথাটাই বলতে চেয়েছেন। স্বাধীনতা দিলেই যে সমস্যার সুরাহা হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। বিচার বিভাগের দিকে তাকালে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। দরকার মেধাবী ও মেরুদণ্ডসম্পন্ন কর্মকর্তা। আর দরকার রাজনৈতিক ঐকমত্য। পুলিশের পেশাদারি নিশ্চিত করার ব্যাপারে রাজনীতিবিদদের আগ্রহ ও অঙ্গীকার থাকতে হবে।
‘সাধারণ মানুষ এখনো থানায় যেতে ভয় পায়, একেবারে বাধ্য না হলে কেউ থানায় যেতে চায় না’ “মানুষের মন থেকে অহেতুক ভীতি ও ঝামেলার শঙ্কা দূর করতে হবে।’
পুলিশ জনগণের বন্ধু হবে যদি তারা দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে, জনগণের প্রতি নিঃস্বার্থ সেবা প্রদান করে এবং তাদের সহায়তায় কাজ করে। এজন্য পুলিশকে জনবান্ধব হতে হবে, যা কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।

লেখক: মহাসচিব, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম জাতীয় কমিটি, চেয়ারম্যান, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ, উখিয়া, কক্সবাজার।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102