
মোঃ রায়হান পারভেজ নয়ন,
নীলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তবে এখনও নদী তীরবর্তী মানুষের মনে আতঙ্ক কাটেনি। গত কয়েক দিনের টানা বন্যা, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি আর রাতের অনিশ্চয়তা এখনো তিস্তা পারের মানুষের মনে তাজা দাগ রেখে গেছে।
৬ অক্টোবর দুপুর ১টার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ডিমলা তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল বিপদসীমার নিচে ১১ সেন্টিমিটার। অথচ তার আগের দিন, অর্থাৎ ৫ অক্টোবর রাত ১১টার সময় একই স্থানে পানি ছিল বিপদসীমার ওপরে ৩৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে তিস্তার পানি প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার কমেছে।
হঠাৎ করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৫ অক্টোবর রাতেই পাউবো রেড অ্যালার্ট জারি করেছিল। ফলে নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার তিস্তা তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষ নির্ঘুম রাত কাটায়। পানির তোড়ে মুহূর্তেই ভেসে যায় ঘরবাড়ি, রাস্তা ও ফসলের জমি। ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, গয়াবাড়ি, ঝুনাগাছ চাপানী, টেপাখড়িবাড়ীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, তিস্তার বন্যায় শত শত পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। হাজারো একর ফসলি জমি ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। গবাদি পশু হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
তবে বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজের ৫২টি জলকপাটের মধ্যে ৭টি খোলা রাখা হয়েছে, যাতে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। এতে নদীর পানি ধীরে ধীরে কমছে এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে, প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছে এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন ও সহায়তা প্রদানে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তিস্তা তীরবর্তী মানুষ এখন একটাই আশায় বুক বেঁধে আছে মহা তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে কি না। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্পের আশায় নদীপারের মানুষ অপেক্ষা করছে। তাদের আশা, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তিস্তার অনিয়ন্ত্রিত ভাঙন ও বন্যার ভয়াবহতা অনেকটাই কমে আসবে।
তিস্তার পানি এখন কমলেও, বন্যার ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে মানুষের জীবনে। কাদা-পানিতে ভরা ঘর, ভেসে যাওয়া ফসল, আর চোখে ভাসমান আতঙ্ক এসবের মাঝেও তারা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে।
এ দিকে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামি সহ আরও অনন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।