শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রাকের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রত্যাশা -২ প্রকল্প উদযাপন অনুষ্ঠিত

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪৪ Time View

 

সানজিদা রুমা নরসিংদী:

“Mental Health in Humanitarian ” এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত ‘প্রত্যাশা–২’ প্রকল্প উদযাপন করেছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২৫। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকাল ১১টায় মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিইন্টিগ্রেশন সাপোর্ট সেন্টার (MRSC), নরসিংদী প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মো. আমিরুল হক, সভাপতি ছিলেন ব্র্যাক জেলা সমন্বয়ক মিজানুর রহমান, এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মনোসামাজিক কাউন্সেলর মেহেদি হাসান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের প্রতিনিধি বৃন্দ, বিদেশফেরত অভিবাসী, তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

প্রধান অতিথি ডা. সৈয়দ মো. আমিরুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য এখন একটি মৌলিক অধিকার। ব্র্যাক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং প্রশংসনীয়।” তিনি আরও বলেন, Mental health in humanitarian emergencies—এই মূলমন্ত্র সত্যিকার অর্থেই বর্তমান সময়ের এক গভীর বাস্তবতা তুলে ধরে। যখন মানুষ দুর্যোগ, যুদ্ধ, অভিবাসন বা জীবনের অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়, তখন শারীরিক নয়, মানসিক আঘাতটিই থেকে যায় সবচেয়ে গভীরে। তিনি আরও বলেন— মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের সমাজে এখনো নীরবতা বিরাজ করে। মানুষ শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের কাছে যায়, কিন্তু মানসিক কষ্টকে লুকিয়ে রাখে। অথচ মানসিক স্বাস্থ্যও শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই জরুরি। আমাদের বুঝতে হবে—মানসিক অসুস্থতা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি চিকিৎসাযোগ্য। আমাদের চিকিৎসক সমাজ, পরিবার, ও কমিউনিটি—সবাইকে এই বিষয়ে সংবেদনশীল হতে হবে।”

সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, “প্রত্যাশা–২ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদেশফেরত অভিবাসী ও তাদের পরিবারের মানসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কাজের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করছি যেন প্রত্যেক অভিবাসী আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পান। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া পুনর্বাসনের এই প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ হয় না।” তিনি আরও যোগ করেন, “আজকের এই আয়োজন কেবল একটি দিবস উদযাপন নয়, এটি একটি বার্তা—যাতে আমরা সবাই মানসিক সুস্থতাকে গুরুত্ব দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে শিখি।”

প্রবন্ধ উপস্থাপক মেহেদি হাসান বলেন, “বিদেশফেরত অভিবাসীদের অনেকেই মানসিক চাপ, একাকীত্ব, উদ্বেগ ও আত্মসম্মানহীনতায় ভোগেন। তারা দীর্ঘ সময় বিদেশে কষ্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন, কিন্তু অনেক সময় সামাজিক ও পারিবারিক পরিসরে মানিয়ে নিতে পারেন না। তাদের জন্য কাউন্সেলিং ও মানসিক সহায়তা সেবা অত্যন্ত জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের সমাজে এখনো মানসিক স্বাস্থ্যকে ঘিরে নানা ভুল ধারণা রয়েছে। মানুষ এখনো কাউন্সেলিং নিতে সংকোচ বোধ করে। অথচ কাউন্সেলিং হলো সচেতনতার একটি প্রতীক, যা মানুষকে জীবনের প্রতি নতুনভাবে দৃষ্টিভঙ্গি দিতে সাহায্য করে।”
ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, “বিদেশফেরত অভিবাসীদের কল্যাণে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিকভাবে সুস্থ না হলে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া কখনোই সম্পূর্ণ হয় না। তাই ব্র্যাকের এই উদ্যোগ অভিবাসীদের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা, সেবার সহজলভ্যতা, পরিবার ও সমাজের সহায়ক ভূমিকা এবং কমিউনিটি পর্যায়ে মানসিক সহায়তা কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। শেষে বিদেশফেরত অভিবাসী ও তাদের পরিবারের জন্য বিনামূল্যে কাউন্সেলিং সেবার সুযোগ সম্পর্কেও তথ্য প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানের সমাপনীতে অতিথিবৃন্দ বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা মানে মানুষকে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেওয়া। সমাজে এই আলো ছড়িয়ে দিতে আমাদের সবাইকেই এগিয়ে আসার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102