
লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম
“বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে নজরুলের হিন্দু সহধর্মিণী “প্রমিলা দেবিকে” দিয়ে ধুতরা বিষ প্রয়োগে পাগল করেছিলেন!”
মানুষ কত নিচে নামতে পারে? লজ্জাশরম ধর্মকর্ম মানবতা মানুষ্যত্ব সবই কি বাত কি বাত! শুধু কথার কথা যদি হবে তবে কেন কুরআন গীতা বেদ বাইবেল পাঠ? কেন ধর্মীয় মুখোশে লেবাস বদল। কুরআন যা বলে নাই তার থেকে বেশী পর্দা, গীতা বাইবেল যা বলেছে তা রেখে লোক দেখানো মন্দির গির্জা স্বর্ন দিয়া তৈরি, কুরআনে বলেছে, “আগে মোমেন হতে” অর্থাৎ কম পক্ষে মানুষ হতে, ঐ দুটো পা, দু’টো হাত, দু’টো চোখ ওয়ালা নয় শুধু, নিজে ভালো খেয়ে টয়লেটে মল নিঃসরণ নয় সারাটা জীবন কর্ম! মানুষ সমাজ রাষ্ট্রের জন্য কিছু করা হলো জীবন!
প্রিয় পাঠক, আমরা আগে বাঙালি তারপর মুসলমান! বিশ্বে দুই ভাবে জাতি নির্ধারণ হয়, ভাষা ও ধর্ম! আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন দু’জন মহান ব্যক্তি, রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুল ইসলাম!
এ ছাড়া ও ইসমাইল হোসেন সিরাজী, জীবনানন্দ, তারাশঙ্কর, মাইকেল মধুসূদন, কবি জসিমউদদীন, বঙ্কিম, শরৎ, আরো অনেকে!
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রায় আটত্রিশ বছরের ছোট বড়! তবু ও দু’জন ছিলেন হরিহর আত্মা! সেই রবীন্দ্রনাথ ছলে বলে কৌশলে কাজী নজরুলের সাথে “প্রমিলা দেবিকে বিয়ে দিয়েছিলেন এবং প্রমিলা দেবিকে দিয়ে নজরুল কে ধুতরায় বিষ খাওয়ায় পাগল করেছিলেন, এমটা কি বিশ্বাস যোগ্য? তারপর নজরুলের পান্ডুলিপি চুরি করে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজি করে নিজ নামে নোবেল কমিটির কাছে প্রেরণ করে “নোবেলজয়ী” হয়েছিলেন, তা কি বিশ্বাস যোগ্য? এমন সব বলে ভিডিও বানায় ছেড়ে দিচ্ছে মিডিয়ায়! তারপর উদ্দেশ্য কি, রবীন্দ্রনাথ কে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা? এমন তো আইয়ুব মোনেম আমলে হয়েছিলো, বাংলাদেশ আমলে কয়েকবারে অলিখিত নিষেধাজ্ঞায় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ মাঝে মাঝে পড়ে যান! কখন পড়ে যান, যখন আমরা কুরআনের মুসলমান থেকে অতি মুসলমান হয়ে যাই! যখন আমরা ধর্মকে বর্ম বানাই!
প্রিয় পাঠক, আসুন একটু আলোচনা করি রবীন্দ্রনাথ কেমন হিন্দু ছিলেন, নজরুল ইসলাম কেমন মুসলমান ছিলেন? এই দুইজন একে অপরকে কতটা ভালোবাসতেন?
রবীন্দ্রনাথ পাঞ্জাবের অমৃতসরে জানি ওয়ালা বাগ হত্যা কান্ডের জন্য তার বৃটিশ দেয়া “নাইট উপাধি” ততকালীন বড় লাটকে চিঠি লিখে প্রত্যাখান করেন! যার গ্রেফতার নিয়ে সভা ও হত্যাকান্ড তিনি
এজন মুসলমান নেতা ডঃ মানিক!
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল কেমন মুসলমান ছিলেন তা তার জাতের নামে বজ্জাতি কবিতা পড়লে বুঝতে পারবেন! তিনি ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ একজন খাঁটি বাঙালি!
পাঠক, রবীন্দ্রনাথ নোবেল পেয়েছেন ১৯১৩ সালে তখন কাজী নজরুল মাত্র ১৩ বছরের বালক, ঘেটুর দলে গান গেয়ে বেড়ান! ১৯২১ সালে কাজী নজরুল রবীন্দ্রনাথের সাথে প্রথম দেখা করেন এবং পরিচিত হন! নজরুল ইসলাম ২৪ বছর বয়সে “ধুমকেতু” লিখে বৃটিশ রোষানলে পড়েন এবং জেলে যান! রবীন্দ্রনাথ তার জেলে থাকা অবস্থায় “বসন্ত নাটক” নজরুল কে উৎসর্গ করেন! নজরুল পরবর্তী তে তার “সঞ্চিতা” গ্রন্হ রবীন্দ্রনাথ কে উৎসর্গ করেন!” নজরুলের “গোরা” উপন্যাস সিনেমা হলে নজরুল ইসলাম রবীন্দ্রনাথের গান তার সুরে সিনেমায় যোগ করেন, সেন্সার বোর্ডের আপত্তি তে বইটা মুক্তি পাওয়া আটকে যায়! নজরুল সরাসরি রবীন্দ্রনাথের কাছে গেলে তিনি সাথে সাথে লিখে দেন, নজরুলের সুর ই আসল সুর, আমার কোন আপত্তি নাই!
১৯২৩ সালে নজরুল আলীপুর গ্রেফতার হয়ে আলীপুর জেলে যান, সেখান থেকে হুগলি জেলে বদলি হলে পুলিশ সুপারের খারাপ ব্যবহারে অনশন করেন! সে অনশন ৩৯ দিন একটানা চলে, রবীন্দ্রনাথ চিঠি লিখেন, “তোমার মত প্রতিভার বেঁচে থাকা প্রয়োজন, অনশন ভঙ্গ করো!”
এমন স্নেহ ভালোবাসার দুই প্রতিভাকে হিন্দু মুসলমান বানায়, বানোয়াট কথার গল্প ফেদে কিছু লোককে হয়তো বোকা বানানো যাবে তবে কেউ বিশ্বাস করবে না!
ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন নিজ দেশকে ভালোবাসেন! মানবতা মনুষ্যত্ব তাকওয়া পূর্ণ জীবনের অকৃপণ কৃতজ্ঞ পরোপকারী মানুষ হোন!