শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৮ অপরাহ্ন

সৎ সাহসী ও যোগ্য শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ — আপোষহীন সংগ্রামী শিক্ষক নেতার প্রতিচ্ছবি

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৫৯ Time View

 

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির

জাতির অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি শিক্ষা, আর সেই শিক্ষার মূল চালিকা শক্তি শিক্ষক। কিন্তু সব শিক্ষক একরকম নন — কেউ শুধুমাত্র পাঠদানেই সীমাবদ্ধ থাকেন, কেউ আবার সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত হয়ে ওঠেন। এমনই এক অসাধারণ শিক্ষক নেতা, যিনি সত্য, সাহস ও ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে আলোকিত করেছেন শিক্ষক সমাজকে — তিনি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ ।

একদিকে তিনি একজন সফল সংসদ সদস্য, অন্যদিকে একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষানেতা, যিনি সারাজীবন ধরে শিক্ষক সমাজের ন্যায্য দাবি আদায়ের সংগ্রামে থেকেছেন অগ্রভাগে। তাঁর আপোষহীন নেতৃত্ব, সততা ও দৃঢ়তার কারণে তিনি আজ শিক্ষকদের হৃদয়ের এক অবিচল প্রেরণার নাম।

শিক্ষক নেতা হিসেবে উত্থান

দেলোয়ার হোসেন আজিজের জীবনের শুরুটা ছিল একেবারেই সাধারণ। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী, সৎ ও পরিশ্রমী। শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের পর তিনি বুঝেছিলেন — দেশের শিক্ষক সমাজের অবস্থা কতটা শোচনীয়, তাদের প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার কতটা উপেক্ষিত।
এই উপলব্ধিই তাঁকে পরিণত করে এক আন্দোলনকারী নেতায়।

তিনি বুঝেছিলেন, শুধু ক্লাসরুমে পাঠদান করলেই শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন আসবে না; দরকার শিক্ষকদের মর্যাদা ও ন্যায্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। সেই চিন্তা থেকেই তিনি যোগ দেন শিক্ষক আন্দোলনে। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন শিক্ষক সমাজের মুখপাত্র, নেতৃত্বের প্রতীক।

 

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে লড়াই

বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষকদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ “এমপিও” — Monthly Pay Order। এটি শিক্ষকদের জীবিকা, সম্মান ও টিকে থাকার ভিত্তি। কিন্তু বহু বছর ধরে এই এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ছিলেন অবহেলিত। তাঁদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, পদোন্নতি, চিকিৎসা ভাতা, পেনশন — এসব দাবিতে আন্দোলন চলেছে বছরের পর বছর।

এই দাবিগুলোর নেতৃত্বে যাঁকে শিক্ষক সমাজ একত্রিত করেছে, তিনি হলেন অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ।
তিনি কেবল মিছিল বা সভায় বক্তৃতা দেননি — তিনি ছিলেন মাঠে-ময়দানে, রোদে-বৃষ্টিতে, সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। তাঁর কণ্ঠে গর্জে উঠেছিল সেই অমর বাণী:

“শিক্ষকের সম্মান কোনো দয়া নয়, এটি অধিকার।”

 

এই একটি বাক্য যেন নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছিল ৬ লক্ষ এমপিওভুক্ত শিক্ষকের হৃদয়ে।

 

আপোষহীনতার প্রতীক

অধ্যক্ষ আজিজের জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তাঁর আপোষহীন মনোভাব। ক্ষমতার প্রলোভন, রাজনৈতিক চাপ কিংবা ব্যক্তিগত সুবিধা — কিছুই তাঁকে ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।
তিনি বারবার বলেছেন,

“ন্যায়ের পথে আপোষ মানে অন্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ।”

 

এই বিশ্বাসে তিনি কখনোই নিজেকে বিকিয়ে দেননি। বরং তাঁর দৃঢ় অবস্থান ও স্পষ্টভাষী নেতৃত্ব তাঁকে দিয়েছে অসংখ্য সমর্থক, আবার অনেক বিরোধীও। কিন্তু তিনি জানতেন — ইতিহাসে স্থান পান সেই মানুষই, যিনি সত্যের পথে অবিচল থাকেন।

 

নেতৃত্বে মেধা ও মানবতা

একজন নেতা কেবল বক্তা নয়, তিনি অনুপ্রেরণার উৎস। দেলোয়ার হোসেন আজিজের মধ্যে রয়েছে সেই অসাধারণ ক্ষমতা — তিনি মানুষকে সাহস দেন, বিশ্বাস জাগান, আশা জাগান।
শিক্ষক সমাজে তিনি শুধু নেতা নন, তিনি বড় ভাই, বন্ধু ও অভিভাবক।

শিক্ষার্থীদের কাছেও তিনি প্রিয়। কারণ তিনি জানেন, শিক্ষাদান মানে শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান বিতরণ নয় — বরং শিক্ষার্থীর মননে আলোকিত চিন্তা জাগানো।
তিনি সবসময় বলেন,

> “শিক্ষক সমাজের দায়িত্ব শুধু জ্ঞান বিতরণ নয়, সত্য ও ন্যায়ের শিক্ষা দেওয়া।”

 

এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।

 

দাবী আদায়ের সংগ্রাম — এক নিরন্তর যুদ্ধ

অধ্যক্ষ আজিজের নেতৃত্বে শিক্ষক সমাজের আন্দোলন কেবল বেতন বাড়ানোর দাবি ছিল না; এটি ছিল মর্যাদা ও ন্যায়ের দাবি।
তিনি বলতেন,

“আমরা শিক্ষকেরা জাতি গড়ি। আমাদের দাবি পূরণ মানে জাতি গঠনের স্বীকৃতি।”

 

রোদ-বৃষ্টি, ক্লান্তি, সরকারি বাধা — কিছুই তাঁকে থামাতে পারেনি। রাজধানীর রাজপথ থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাদ্রাসা পর্যন্ত তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছে এক প্রতীক হিসেবে —
“দাবির সৈনিক দেলোয়ার হোসেন আজিজি।”

 

সততা ও ত্যাগের মহিমা

তিনি ইচ্ছে করলেই আন্দোলনকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে পারতেন, নিজের অবস্থান শক্ত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল সহকর্মীদের অধিকার।
তিনি জানতেন, সত্যিকারের নেতা সেই, যিনি নিজের চেয়ে জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন।

এমন সততার উদাহরণ আজকের সমাজে বিরল। আর সেই কারণেই তিনি শিক্ষক সমাজের কাছে এক অনন্য প্রতিচ্ছবি হয়ে আছেন —
একজন লোভহীন, সাহসী ও সততার প্রতীক শিক্ষক নেতা।

 

শিক্ষার আলো ও মানবিকতার মিশেল

অধ্যক্ষ আজিজের নেতৃত্ব কেবল আন্দোলনে সীমাবদ্ধ নয়; তিনি শিক্ষা উন্নয়ন, শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠন, এবং সমাজে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায়ও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, শিক্ষা কেবল পেশা নয় — এটি এক মহান দায়িত্ব।
তাঁর প্রিয় উক্তি —

> “একজন শিক্ষকের কলম থেমে গেলে, সমাজের বিবেক নিস্তব্ধ হয়ে যায়।”

 

এই বিশ্বাস থেকেই তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠান কাতলা সেন কামিল মাদ্রাসা-কে গড়ে তুলেছেন এক আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সেখানে শৃঙ্খলা, সৃজনশীলতা ও নৈতিকতার মেলবন্ধন দেখা যায়।

 

মানুষের নেতা, শিক্ষকদের প্রেরণা

যাঁরা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা জানেন — তাঁর ব্যক্তিত্বে রয়েছে মমতা, শাসনে রয়েছে ভালোবাসা। তিনি কঠোর কিন্তু ন্যায্য। তাঁর চোখে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ, তাঁর মনে সহকর্মীদের কল্যাণ।
তাঁর এক শিক্ষার্থী যেমন বলেছিলেন —

> “আপনার শিক্ষার্থী হতে পেরে আমি ধন্য।”

 

এ বাক্যই যেন তাঁর জীবনের সাফল্যের সবচেয়ে বড় পুরস্কার।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা

একদিন হয়তো অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ থাকবেন না, কিন্তু তাঁর আদর্শ থাকবে চিরন্তন। ভবিষ্যতের শিক্ষক সমাজ যখন ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য সংগঠিত হবে, তখন তাঁর নামই উচ্চারিত হবে প্রেরণার উৎস হিসেবে।
তাঁর সংগ্রাম, তাঁর বক্তব্য, তাঁর নৈতিক দৃঢ়তা — সবকিছুই হয়ে থাকবে ইতিহাসের অংশ।

 

উপসংহার

অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ এমপি কেবল একজন শিক্ষক নন, তিনি একজন আদর্শ, একজন সংগ্রামী যোদ্ধা, একজন সত্যভাষী নেতা।
তিনি প্রমাণ করেছেন —

> “শিক্ষক শুধু পাঠদাতা নয়, সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত।”

 

তাঁর সততা, সাহস ও ত্যাগ শিক্ষক সমাজকে পথ দেখাবে যতদিন বাংলাদেশে শিক্ষা বেঁচে থাকবে।
তিনি এক অমর আলোকবর্তিকা, যাঁর আলো নিভে গেলেও দ্যুতি থেকে যাবে অনন্তকাল।

 

আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সুস্থ রাখুন, শক্তি দিন, এবং তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে শিক্ষক সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাক পূর্ণতা।
অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ — আপনি আমাদের গর্ব, আমাদের প্রেরণা, আমাদের শিক্ষক নেতা।

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির
চেয়ারম্যান জাতীয় মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম কেন্দ্রিয় কমিটি।
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ এমপি অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা কর্মচারী কল্যাণ ফোরাম।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102