
ভিন্ন মত
নিজের শর্তে বাঁচতে চাওয়া নয়কো মোটে সোজা,
প্রতি পদেই হোঁচট খাওয়া আর কিছু ভুল বোঝা।
নিজের মত বাঁচতে আমি তাতে কার কি ক্ষতি?
সংসার মানে বোঝাপড়া এছাড়া নেই গতি।
লোককে খুশি করতে গিয়ে ইচ্ছেরা হয় বলী,
শান্তি বজায় রাখতে গিয়ে তাকেই মেনে চলি।
ইচ্ছেগুলি বিদ্রোহী হয় চঞ্চল হয় মন-
জীবন মানে শুধুই আপোষ ভরে চোখের কোন।
তোমার ইচ্ছা কারোর থেকে ভিন্ন হতেই পারে,
তাতেই ঘটবে নানা সংঘাত বোঝাবে তা কারে!
ইচ্ছাগুলি পৃথক হলেই যত বাঁধে গোল-
আপোষ করলে তবেই শান্তি নইলে গন্ডগোল।
অদ্ভুত দাম্পত্য
হিমশীতল ভালোবাসার উত্তাপ হীন দাম্পত্য,
যদিও টেনে নিয়ে যেতে হয় সামাজিকতার চাপে-
কখনো বা সন্তানের মুখ চেয়ে।
স্বামী স্ত্রী দুজনেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত,
কেউ কারো প্রতি কণামাত্র নির্ভরশীল ও নয়, দায়বদ্ধতাও নেই;
স্বামী ও চুপ, স্ত্রী ও চুপ শব্দেরা নীরব।
এখন আর পারস্পরিক ঝগড়া হয় না, মতবিরোধ ও নেই –
আসলে দুপক্ষই দুজনার প্রতি প্রবল উদাসীন;
পারস্পরিক বিপন্নতা দুপক্ষের নজর এড়িয়ে যায়,হয়তো বা মজে অন্য বন্ধুত্বের বন্ধনে।
ভালোবাসা হারিয়েছে গভীরে,
কর্মাবসরে দুজনেই ডুবে মোবাইলে
কিছু কথা হয় নেহাতই প্রয়োজনের তাগিদে ।
আন্তরিকতা আর প্রেমহীনতায় কেটে যায় দিন
ফাটল ধরা দাম্পত্যকে বয়ে বয়ে।
দুজনেই যে যার মতো স্বাধীন ও সুখী
হয়তো সন্তানের প্রতি দায়বদ্ধ, জীবনসঙ্গীর প্রতি নয়-
দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে প্রেমহীন জনশূন্য বন্দরে।
রূপ অরূপের খেলা
রক্ত মাংস অস্থির সমারোহে সুবিন্যস্ত এ শরীর তো নশ্বর খাঁচা মাত্র-
প্রাণপাখি সেথায় সযত্নে সংরক্ষিত ।
জানি এ ভঙ্গুর খাঁচা জীর্ণ হবে একদিন,
পরাণপাখী উড়াল দেবে আপন খেয়ালে
কখন উড়াল দেবে সে ভয়ে সদাকম্পিত প্রাণ।
ছেড়ে যাবো জেনেও তবু তো এই মনে মানুষের প্রতি কত অনুরাগ,
মানুষের সঙ্গ পেতে সদা ব্যাকুল এ প্রাণ।
কেন এ মায়া বাঁধন যদি অচিরেই ছিন্ন হয়ে যায়?
এ ব্যাকুলতা,কাছে পাওয়ার অদম্য আকাঙ্ক্ষা কেন সৃষ্টিকর্তার প্রতি জাগে না!
তুমি তো আদি অনন্ত, চির শাশ্বত অবিনশ্বর সত্ত্বা
চিরদিবসের সে রাজার আলোয় আলোকিত এই নশ্বর দেহ খাঁচা,
তবু কেন যোজন যোজন ব্যবধান সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে?
জাগতিক মোহ-মায়ার ঘন তিমিরে আজো আকন্ঠ নিমজ্জিত;
ছিঁড়ে যাক এ মায়ার জাল
অজ্ঞানতার ঘন তমসা ভেদ করে জ্বলে উঠুক সুচেতনার আলো।
আত্মা হোক শুদ্ধ-
যেন অন্তিমে জীবন মরণের প্রান্তে দেখতে পাই তোমার মোহন রূপ।
যেন শেষ প্রহরে তোমার চরণ প্রান্তে পৌঁছাতে পারে এ নশ্বর দেহ-খাঁচা-
উৎফুল্লিত তৃষিত প্রাণ হবে আনন্দে আত্মহারা।