শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা ও পৌর জামায়াতের আয়োজনে ছাত্র- জনতার সমাবেশ অনুষ্ঠিত কটিয়াদীতে রিকশাচালকের লাশ উদ্ধার ডিমলায় বুড়ি তিস্তা খনন প্রকল্পের বিরুদ্ধে পাঁচ গ্রামের মানুষের মশাল মিছিল মধ্যরাতে গোয়াইনঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউএনও বাংলার মাটিতে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে দেওয়া যাবে না- নূরুল ইসলাম সাদ্দাম দুর্নীতি বন্ধে তরুণদের শক্তিশালী করতে হবে গোয়াইনঘাটে এনসিপির মতবিনিময় সভায়- ফয়সল আহমদ গণমানুষের স্বার্থরক্ষায় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি লেখকরাও দায়বদ্ধ- মুনীর চৌধুরী সোহেল সাতকানিয়া লোহাগাড়া মানবিক ফাউন্ডেশনের ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান জগন্নাথপুরে জামায়াতের গণমিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত কবিতাঃ এই দেশ আমার

সরকারি–বেসরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ৯ম পে–স্কেল সর্বজনীন বাস্তবায়নের দাবি

Coder Boss
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৩৭ Time View
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সমীপে এক বিস্তৃত, বিশ্লেষণধর্মী ও মানবিক আবেদন
লেখক: এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির                  রাষ্ট্র যখন কর্মীর পাশে দাঁড়ায়, তখনই উন্নয়ন টেকসই হয় বাংলাদেশ আজ এক গভীর পরিবর্তনের সময় অতিক্রম করছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি প্রশাসনিক সংস্কার, অর্থনীতির পুনর্গঠন, দুর্নীতি দমন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি—সব ক্ষেত্রেই একটি নতুন গতি সৃষ্টি হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে নতুন নেতৃত্বের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এবং দেশের সাড়ে বারো কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণের আপ্রাণ চেষ্টা।রাষ্ট্র পরিচালনার যে বিশাল কাঠামো প্রতিদিন চলমান থাকে—মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুলিশ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, বেসরকারি খাত—এসবই দাঁড়িয়ে আছে কোটি কোটি বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর।

এই মানবসম্পদই রাষ্ট্রের প্রাণশক্তি।
এদের শ্রম, মেধা ও সততা দিয়েই দেশ এগিয়ে যায়।

কিন্তু যখন এই বিশাল কর্মীসমাজ নিজেরাই বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে—তখন সেই রাষ্ট্রের কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে।
আজকের বাংলাদেশ সেই সংকটের মুখোমুখি।

মূল্যস্ফীতি আকাশছোঁয়া, জীবনযাত্রার ব্যয় লাগামহীন, কিন্তু বেতন কাঠামো ১০ বছর ধরে অপরিবর্তিত।

ফলে সরকারি–বেসরকারি দুই সেক্টরের কর্মচারীরাই এখন মানবিক সংকটে।
এই অবস্থার অবসান ঘটাতে ৯ম জাতীয় পে–স্কেল অবিলম্বে ঘোষণা ও বাস্তবায়ন সময়ের অপরিহার্য দাবি।

এই আর্টিকেলটি সেই দাবির ভিত্তি, যুক্তি, বাস্তবতা, মানবিকতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন তুলে ধরে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট একটি বিনীত, যুক্তিসম্মত ও জরুরি আবেদন।

১. কেন ৯ম পে–স্কেল এখনই প্রয়োজন : বাস্তবতার গভীরে নজর
১.১ ৮ম পে–স্কেল—২০১৫ সালের কাঠামো ২০২৫ সালে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক

একটি বেতন কাঠামো সাধারণত ৫ বছর পরপর আপডেট করার প্রচলন রয়েছে অনেক দেশে।
কিন্তু আমাদের দেশে ৮ম পে–স্কেল ১০ বছর ধরে অক্ষত, কোনো পরিবর্তন নেই।

এই ১০ বছরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে—

খাদ্যপণ্যে: ১২০%–২৫০%

বাসাভাড়া: ৮০%–২০০%

চিকিৎসা ব্যয়: ১৫০%–৩০০%

শিক্ষাব্যয়: ২০০%–৩৫০%

পরিবহন: ৮০%–১৫০%

বিদ্যুৎ–গ্যাস বিল: কয়েক দফায় দ্বিগুণ

অথচ সরকারি চাকরিজীবীরা পেয়েছেন—

বেতন বৃদ্ধি: শূন্য

ইনক্রিমেন্ট: ৫% (অপরিবর্তিত)

ভাতা: নগণ্য বৃদ্ধি

এটি একটি বাস্তবতা যে—বর্তমান পে–স্কেল কর্মচারীদের ন্যূনতম জীবনমানও রক্ষা করতে পারছে না।

১.২ সরকারি কর্মচারীদের বাস্তব কষ্ট : মানুষের মুখের ভাষায় ‘মাস চলে না’

চলুন একজন সাধারণ সরকারি কর্মচারীর প্রতি মাসের ব্যয়ের দিকে নজর দেই:

খাত    মাসিক ব্যয়    মন্তব্য
বাসাভাড়া    ১২,০০০–২০,০০০    ঢাকায় ২৫,০০০+
খাবার    ১০,০০০–১৫,০০০    ন্যূনতম পরিবারের জন্য
শিক্ষা    ৪,০০০–৮,০০০    স্কুল-কলেজে বহুগুণ বৃদ্ধি
চিকিৎসা    ২,০০০–৬,০০০    বেসরকারি চিকিৎসায় অত্যধিক খরচ
যাতায়াত    ২,০০০–৪,০০০    জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি
নিত্যপ্রয়োজনীয়    ৫,০০০+    পোশাক, আনুষঙ্গিক

➡️ মাসিক ব্যয় প্রায় ৩৫,০০০–৫০,০০০ টাকা, যা অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনকেও ছাড়িয়ে যায়।

এ অবস্থায় তারা:

নিজের সন্তানের পড়াশোনা ব্যাহত করতে বাধ্য

বাবা–মায়ের চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ

স্বাস্থ্যসেবা নিতে দেরি করেন

বাড়ি ভাড়া বকেয়া থাকে

ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হন

এটি শুধু বেতনের সংকট নয়—এটি মানবিক সংকট, যা অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ দাবি করে।

১.৩ বেসরকারি কর্মচারীদের অবস্থা আরও ভয়াবহ

বাংলাদেশে বেসরকারি চাকরিজীবীদের সংখ্যা সরকারি কর্মচারীর চেয়ে অনেক বেশি।
কিন্তু তাদের অবস্থা—

মাসে ৮,০০০–১৮,০০০ বেতন

কোনো ইনক্রিমেন্ট নেই

চাকরি নিরাপত্তা নেই

মাতৃত্ব/আঘাতজনিত ছুটি নেই

চিকিৎসা সুবিধা নেই

অবসরের পরে কোনো নিরাপত্তা নেই

অনেকে পূর্ণ মাস কাজ করে—

পরিবারের ভাড়া, খাবার, ওষুধ, শিক্ষাব্যয় তুলতেই হিমশিম খান।

এ অবস্থায় রাষ্ট্র যদি ন্যূনতম বেতন কাঠামো না দেয়, তবে বেসরকারি খাতে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হবে—যা জাতীয় অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

২. রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বেতন কাঠামোর সম্পর্ক
২.১ কর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়লে রাষ্ট্র দুর্বল হয়

যে কর্মচারী মাস শেষে পরিবার চালাতে পারেন না, তার—

মনোযোগ কমে যায়

কাজে উৎসাহ কমে

চাকরির প্রতি নিষ্ঠা হ্রাস পায়

মানসিক চাপ বেড়ে যায়

একজন মানসিকভাবে চাপগ্রস্ত কর্মচারী কখনোই রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ দিতে পারে না।

২.২ বেতন বৃদ্ধি অর্থনীতিকে চাঙা করে

যখন কর্মচারীদের হাতে অর্থ থাকে—

স্থানীয় ব্যবসা বাড়ে

বাজারে কেনাবেচা বাড়ে

ভোগব্যয় বৃদ্ধি পায়

কর রাজস্ব বাড়ে

অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায়

আজ বাংলাদেশে যে মন্দাভাব— সেটির অন্যতম কারণ মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া।

৯ম পে–স্কেল বাস্তবায়িত হলে—

➡ প্রায় ৩ কোটি মানুষের আয় বৃদ্ধি পাবে
➡ বাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়বে
➡ বাণিজ্য উন্নত হবে
➡ রাজস্ব বাড়বে

অর্থনীতিবিদদের মতে এটি অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করবে।

২.৩ দুর্নীতি কমানোর প্রধান শর্ত হলো ন্যায্য বেতন

বিশ্বব্যাপী গবেষণায় দেখা যায়:

“বেতন যত কম, দুর্নীতি তত বেশি।”

কম বেতনের কর্মচারী নিজেই আর্থিক চাপে থাকে

পরিবার চালাতে গোপন আয়ের চিন্তা আসে

ঘুষ/বদলি/সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে

অন্যদিকে—

উচ্চ বেতন মানসিকভাবে কর্মচারীকে সৎ থাকতে উৎসাহ দেয়।

বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ৯ম পে–স্কেল জরুরি।

৩. ৯ম পে–স্কেল কেমন হওয়া উচিত?

৯ম পে–স্কেল শুধু বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা নয়—এটি হওয়া উচিত একটি সমন্বিত মানবিক সংস্কার।

৩.১ মূল বেতন ন্যূনতম দ্বিগুণ

মূল বেতন কম থাকলে কোনো ভাতা গণনা বাস্তবসম্মত হয় না।

৩.২ বাস্তবভিত্তিক বাসাভাড়া বৃদ্ধির প্রয়োজন

ঢাকায় সরকারী কোয়ার্টার সীমিত—বাকি সবাইকে উচ্চ ভাড়ায় থাকতে হয়।

৩.৩ বেসরকারি খাতে ন্যূনতম বেতন কাঠামো বাধ্যতামূলক

এটি না হলে সমাজে বৈষম্য বাড়বে।

৩.৪ চিকিৎসা সুবিধা শক্তিশালী করতে হবে

বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় অত্যধিক।

৩.৫ পেনশন–গ্রাচুইটি বাস্তবায়ন

অনেক কর্মকর্তা কর্মজীবনের শেষদিকে আর্থিক অনিশ্চয়তায় থাকেন।

৪. আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট: আমরা কত পেছনে?
ভারত

প্রতি ১০ বছরে পে–স্কেল পরিবর্তন; ৮ম পে–স্কেল ২০২৬ সালে।

পাকিস্তান

প্রতি ২–৩ বছরে বেতন সমন্বয়।

মালয়েশিয়া–সিঙ্গাপুর

চাকরির মান, বেতন এবং সুবিধা বিশ্বমানের।

বাংলাদেশে ১০ বছর ধরে কোনো পরিবর্তন নেই—এটি অগ্রগতির পথে বড় বাধা।

৫. মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আমাদের বিনীত, যুক্তিসঙ্গত ও মানবিক আবেদন

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,
আপনার নেতৃত্বে রাষ্ট্রে নতুন আশা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনিক সংস্কার, দুর্নীতি দমন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা—সবই এখন বাস্তব অগ্রগতির পথে।

এই মুহূর্তে দেশের কোটি সরকারি–বেসরকারি কর্মচারী আপনার দিকে তাকিয়ে—

**আপনার একটি সিদ্ধান্ত—৯ম পে–স্কেল ঘোষণা—

তাদের জীবনে আলো ফিরিয়ে আনবে।**

এটি শুধু—

❖ একটি বেতন কাঠামো নয়
❖ একটি মানবিক সিদ্ধান্ত নয়
❖ একটি অর্থনৈতিক উদ্যোগ নয়

এটি—

মধ্যবিত্তকে বাঁচানোর সিদ্ধান্ত
রাষ্ট্রীয় সুশাসনের ভিত্তি স্থাপন
দুর্নীতি কমানোর পথ
কর্মচারীর মর্যাদা পুনরুদ্ধার
জাতীয় অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার কৌশল

আপনার দক্ষ নেতৃত্বে এই কাঠামো ঘোষণা হবে—এটাই দেশের কোটি মানুষের প্রত্যাশা।লেখক:

এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির
চেয়ারম্যান, জাতীয় মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম
মোবাইল: ০১৭১১-৩৭৭৪৫০
ই-মেইল: smsaifulpress24@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102