
আমিনুল হক শাহিন
সৎ, সাহসী ও আদর্শবান কলম সৈনিকের প্রতিকৃতি
সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়—এটি একটি ব্রত, একটি নিরন্তর লড়াই এবং মানুষের কথা বলার অবিচল অঙ্গীকার। সেই ব্রতের আলোয় জ্বলজ্বল করা এক উজ্জ্বল নাম—সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক এবং সাংবাদিকনেতা এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির।
সততার সঙ্গে সাংবাদিকতাকে আয়ত্ত করে, নির্ভীকভাবে সত্য উচ্চারণ করে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে সঠিক পথে হাঁটতে উদ্বুদ্ধ করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সাংবাদিকতার সাহসী বাতিঘর।
বাংলাদেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিক ও একাধিক আঞ্চলিক পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
তাঁর লেখনীতে উঠে এসেছে নিপীড়িত মানুষের দাবি, বঞ্চনার কথা, রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ—এবং সর্বোপরি ন্যায়বিচারের অগ্নিশিখা।
—
জন্ম ও শৈশব
বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার ভাইজোড়া গ্রামের এক সম্মানিত মুসলিম পরিবারে জন্ম এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবিরের।
মাত্র দুই বছর বয়সেই পিতৃহারা হওয়ার শোক তাঁকে জীবনের শুরুতেই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করায়। পরিবারের একমাত্র সন্তান হিসেবে একাকী শৈশবে তিনি গড়ে তোলেন আত্মনির্ভরতা, শক্ত মানসিকতা ও দৃঢ়তা—যা পরবর্তীকালে তাঁর সাংবাদিকতায় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।
—
সাহস, সততা ও সংগ্রামের এক নাম
পেশাগত জীবনের প্রতিটি ধাপে তিনি সত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।
প্রশাসনিক চাপ, রাজনৈতিক হুমকি কিংবা ক্ষমতার প্রভাব—কিছুই তাঁকে থামিয়ে রাখতে পারেনি।
অন্যায়ের কাছে আপস না করা, ঝুঁকি থাকলেও সত্য প্রকাশে পিছপা না হওয়া—এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবিরের সাংবাদিকতার মেরুদণ্ড ছিল এই নৈতিকতা।
দুর্নীতি, অনিয়ম, বৈষম্য ও সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর কলম ছিল এক অদম্য শক্তি।
তার বহু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সরকার, প্রশাসন ও নীতি-নির্ধারকদের নজর কাড়ে; সমাজে সৃষ্টি করে ইতিবাচক পরিবর্তনের স্রোত।
—
সাংবাদিকতার শিক্ষক ও প্রেরণা
তাঁর পরিচয় শুধু একজন পেশাদার সাংবাদিক নন—তিনি ছিলেন সাংবাদিকতার গুরু।
নবীন সাংবাদিকদের পথ দেখানো, মূল্যবোধ শেখানো, নৈতিকতার পাঠ দেওয়া—এসব তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।
যারা তাঁর সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্য পেয়েছেন, তারা আজও তাঁকে প্রশংসা করেন একজন আদর্শ গাইড হিসেবে।
তিনি বিশ্বাস করতেন—
“সাংবাদিক শুধু খবর লেখে না; তিনি সমাজ পরিবর্তনের সৈনিক।”
এই বিশ্বাস থেকেই তিনি গড়ে তুলেছেন অসংখ্য দক্ষ সংবাদকর্মী, যারা আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
—
উপসংহার
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির ছিলেন সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জীবন্ত প্রতীক—একজন নির্ভীক কলমযোদ্ধা, আদর্শবান মানুষ এবং শিক্ষকসুলভ পথপ্রদর্শক।
তাঁর জীবন আমাদের শেখায়, সততা ও সাহস থাকলে সাংবাদিকতা সমাজ পরিবর্তনের শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ইতিহাসে তাঁর নাম চিরদিন লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে—
একজন সংগ্রামী, প্রজ্ঞাবান এবং মানবিক সাংবাদিক হিসেবে।
স্যালুট সাংবাদিক এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবিরকে—
যিনি প্রমাণ করেছেন সত্য ও সাহসের শক্তি সমাজকে বদলে দিতে পারে।
—
আমিনুল হক শাহিন
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)
চট্টগ্রাম ব্যুরোচিফ
জাতীয় দৈনিক নবচেতনা।