
এস এম রকিবুল হাসান
নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
ঝাঁটা দিয়ে ঝাড়ু দিতে ব্যস্ত নিপেন্দ্রনাথ। বাঁকে করে ধান এনে ক্লান্ত ভাদু মহন্ত একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন। আর ধান রেখে সুকোলের ভুটভুটি আবার চলে যাচ্ছে ধান নিতে। স্তূপ করা ধানে পোকা খুজেঁ খাচ্ছে জাতীয় পাখি দোয়েল। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের উঠানে উঠানে এমন দৃশ্য যেন কৃষি প্রধান গ্রাম বাংলার প্রতিচ্ছবি।
ধানের জেলা হিসেবে খ্যাত নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমের আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের উৎসব। কাক ডাকা ভোর থেকে রাত অবধি চলছে কৃষকদের এই ‘মহাযজ্ঞ’।
তবে কৃষকেরা বলছেন, নভেম্বরের ঝড়-বৃষ্টিতে ধান ডুবে গিয়ে আর মাটিতে শুয়ে পড়ায় ফলন কম হয়েছে। সেই সঙ্গে ধানের দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খরচ ওঠা নিয়ে তাঁরা শঙ্কায় রয়েছেন।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বর্ণা-৫ জাতের ধান মানভেদে ১১৪০-১১৫০ টাকায় এবং ব্রি-৫১ জাতের ধান মানভেদে ১১১০-১১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে চলতি আমন মৌসুমে ৩০ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। রোপণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৪৩০ হেক্টর। সে হিসাবে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫১ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারে রোপিত জাতের মধ্যে স্বর্ণা-৫ জাতের ধান বেশি রোপণ করা হয়েছে। এছাড়া ব্রি- ৫১, ৩৪, ৭৫, ৮৭, ৯০; বিনা-১৭ সহ দেশি জাতের অন্যান্য ধান রোপণ করা হয়েছে।
উপজেলার ভাবিচা গ্রামের কৃষক গোপাল চন্দ্র প্রামানিক বলেন, তিনি এবার ৮ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। ধান মোটামুটি ভালোই হয়েছিল। গত নভেম্বর মাসের কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ও ঝড়ে আধা পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়ে। ধান মাটিতে পড়ে যাওয়ায় কাটতে সময় বেশি লেগেছে। ধান খাড়া থাকলে ফলন বিঘাপ্রতি ১ মণ ধান বেশি হতো বলে জানান তিনি।
একই গ্রামের কৃষক রথিন মণ্ডল বলেন, ‘গত নভেম্বরের ঝড়-বৃষ্টিতে আমার কয়েক বিঘার ধান শুয়ে পড়ে। এতে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছি। এদিকে আবার বাজারে ধানের দাম কম। বাড়িতে হালখাতার চিঠি আসা শুরু হয়ে গেছে। খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।’
এ বিষয়ে নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। নমুনা শস্য কর্তন করে বিঘাপ্রতি ১৯ মণ হারে ফলন পাওয়া গেছে। গত নভেম্বরের ঝড়- বৃষ্টিতে ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টিতে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো প্রভাব পড়বে না। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।