রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
আদালতে হাজিরা দিলেন ‘মব জাস্টিস’ এর সাথে যুক্ত থাকা ভুমি দস্যু জাকির হোসেন মুন্সী বিএনপি ক্ষমতায় গেলে হাওরকে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে: আনিসুল হক জগন্নাথপুরে থানা পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২ পাশে থাকলেই সবাই আপন হয় না সখ করে স্বাধীনতা হারায় আহম্মক! মোরেলগঞ্জে ইংরেজ নীলকুঠি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ইতিহাস-ঐতিহ্যের বেদনাবহ ধ্বংসস্মৃতি কবিতাঃ গাঁয়ের জীবনকথা জগন্নাথপুরে এডভোকেট ইয়াসীন খানের সমর্থনে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে জামায়াতের উঠান বৈঠক প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানালেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া প্রেসক্লাব এর অফিস উদ্বোধন

গল্প:- বনলতা সেন

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১২৫ Time View

কবি:- সাহেলা সার্মিন

ভরা শ্রাবণের দুপুর। চারিদিকে খা খা রোদ্দুর। উনিশ তিরানব্বই সালের কথা। তখন স্থল যানের পাশাপাশি জলযান অর্থাৎ নৌকায় যাতায়াত করতে হতো গ্রাম গঞ্জের মানুষের। তখন এখনকার মতো উঁচু রাস্তাঘাট ছিলো না। সামান্য বর্ষার পানি এলেই সব তলিয়ে যেতো। একটু বেশী পানি হলে তো নৌকা ছাড়া কোথাও বেরোবার জো ছিলো না। ছেলে-মেয়েদের স্কুল কলেজ, অফিস- আদালত, হাট- বাজার, যে কোনো কাজে নৌকা চাই-ই চাই।

আমাদের বাড়ির ঘাটে একটি নৌকা বাঁধা থাকতো। সেটায় করে বাজারের সাথে বড় রাস্তায় পার হয়ে গঞ্জে শহরে বা স্কুল কলেজে যেতে হতো। আবার কখনো কখনো বড় রাস্তার কিছু কিছু জায়গা তলিয়ে যেতো। তখন মহাসড়কের সাথে শ্যালো নৌকা করে বাজারে এসে নামতে হতো। আবার যাওয়ার সময় ও শ্যালো বা ছইওয়ালা নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হতো।

এভাবে বর্ষা ঋতুটা খুব কষ্ট করে কলেজে যেতে হতো। তবুও কলেজ কামাই করতাম না। নিয়মিত কলেজ যেতাম। কতো রোদ মাথায় নিয়ে, বৃষ্টির জলে ভিজে,জুতায় কাদা মাখিয়ে সেই দিনগুলো পার করেছি। সেসব কথা মনে পড়লে আজও সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। তখন লেখাপড়ায় আলাদা একটা ভালোলাগা ছিলো, উৎসাহ ছিলো, আগ্রহ ছিলো।

বর্ষায় নৌকায় যাতায়াতটা বেশ ভালো লাগতো। ভীষণ গরমে জবজবে ঘামে যখন অতিষ্ঠ, নৌকায় চড়ে বসলে জলের শীতল হাওয়ায় গা জুড়িয়ে যেতো। শান্ত শীতল পরিবেশ, দলবেঁধে হাঁসের সাঁতার কাটা, লাল সাদা শাপলা গলা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কোথাও। আকাশে মোলায়েম নীল রঙ, মাঝে মাঝে সাদা মেঘের ভেলা, কী অপরূপ দেখতে! কোনো যানজট নেই, ধোঁয়া নেই। একেবারে নির্ভেজাল!

আমরাও নির্ভেজাল ছিলাম। আমরা তিন বান্ধবী একসাথে কলেজে যেতাম আসতাম। আমাদের সম্পর্ক ছিলো মধুর! কলেজে যেতে আসতে কতো রকমের দুষ্টমি চলতো আমাদের মাঝে। মাঝে মধ্যে অবশ্য খুনসুটি ও হতো, তা দু’একদিনের মধ্যে মিটেও যেতো। যেদিন তিনজনের মনই ভালো থাকতো, সেদিন ছোট ছোট ইতিহাস সৃষ্টি হতো।

একদিনের ঘটনা। সকালে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। কখনো বাড়ে কখনো কমে। তাই মাথায় নিয়ে তিন বান্ধবী রওয়ানা দিলাম কলেজের উদ্দেশ্যে। যথারীতি ক্লাস হলো। ছুটির পর আবার একসাথে ফিরছি লোকাল বাসে। নেমে সামান্য হেঁটে গেলাম শ্যালো ঘাটে। সেটার গন্তব্য ঝিটকা। আমরা কেল্লাই বাজারে নামবো। তিনজনই ভালো একটা জায়গা বেছে নিয়ে বসলাম। আট-দশ মিনিটের মধ্যেই নৌকাটা ভরে গেলো।ইয়াং দুটো ছেলে বইয়ের বড় বড় দুটি গাট্রি নিয়ে উঠলো। আমার দৃষ্টি বইগুলোর ওপর। বেশ কিছু সাহিত্যের বই দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে একটি নাম দেখে আমার চোখে মুখে এক বৈদ্যুতিক ঝিলিক খেলে গেলো।

আজই ক্লাসে ম্যাম এই বইটি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং বইটি পড়তে বলেছেন।তাছাড়া সাহিত্যের বইয়ের প্রতি আমার বরাবরই প্রচণ্ড লোভ! এইচ এস সি প্রথম বর্ষে পড়ি, এর মধ্যে অনেক বই পড়ে ফেলেছি।শরৎ সমগ্র, বঙ্কিমের বেশ কিছু উপন্যাস, রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসগুলো প্রায় শেষ করে ফেলেছি। এখন জীবনানন্দের “বনলতা সেন” পড়ার জন্য মনটা ছটফট করছে।

বান্ধবীদের বললাম, দেখবি বইটা কিভাবে আদায় করি? ওরা বললো, পারবি না। আমি বললাম, যদি পারি? ওরা বললো, পারলে বইটি তোর। ওকে ডান।

ওয়াও! এতো সুন্দর সুন্দর বই! আপনাদের কী লাইব্রেরি আছে? একজন খুবই উৎসুক! মুচকি হেসে বলছে,হুম। আপনারা কী মহিলা কলেজে পড়েন? বললাম, হুম। লাইব্রেরি কী আপনিই চালান? বললো, হ্যা, আমরা দুই ভাই চালাই। বললাম, লেখাপড়া করেন না? বললো, হ্যা থার্ড ইয়ারে। পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসা করি। বললাম, ভালো, খুবই ভালো। পড়ালেখা শেষে বেকার হয়ে বসে থাকার সম্ভাবনা নেই। স্বাধীন ব্যবসা, তাও আবার বইয়ের!

যতো প্রকার পাম দেওয়ার দিচ্ছিলাম। দেখলাম একটু একটু কাজ হচ্ছে। আমার বান্ধবীরা মাঝে মাঝে দু’একটি কথায় তাল দিচ্ছে। আমি বললাম, জানেন আমার প্রিয় সখ হচ্ছে বই পড়া। আমার যদি একটি লাইব্রেরি থাকতো —-! আচ্ছা, এই বইটি বিক্রি করবেন? “বনলতা সেন” জীবনানন্দ দাশের? এই বইটি আমি অনেকদিন ধরে খুঁজছি, কিন্তু পাচ্ছি না। একটু দেখতে পারি?

ছেলেটি কোনো ভনিতা ছাড়াই হুট করে বললো, হুম নিন না, বলে গাট্রি খুলে বইটি বের করে আমার হাতে দিলো। বিজয়ী খুশির দুষ্ট দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম দুই বান্ধবীর দিকে। বইটির ওপর আমরা তিন জনেই হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। গন্তব্যের প্রায় কাছাকাছি আসার পর ব্যাগ থেকে টাকা বের করলাম, জিজ্ঞেস করলাম বইয়ের দাম কতো! অনুনয় করে বললো, প্লিজ, টাকা দেবেন না। আপনাদের সাথে যে পরিচয় হলো, ক্ষণিকের হলেও বন্ধুত্ব হলো। থাকনা বন্ধুত্বের সামান্য স্মৃতি চিহ্ন!

ততক্ষণে শ্যালো ঘাটে ভিড়লো। এক হাতে বনলতা সেন অন্য হাতে বিদায় জানালাম। ক্ষণিকের সেই খেয়ালী বন্ধুত্বের স্মৃতি চিহ্নটুকু আজও আছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102