সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তারা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক বেশি প্রাসঙ্গীক শিবগঞ্জে ২৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের উদ্বোধন নিয়ামতপুরে সমন্বিত পানি সম্পদ ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত জগন্নাথপুরে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ধানবীজ ও সার বিতরণ ধর্মপাশার বাদশাগঞ্জ বাজারে আনিসুল হকের পক্ষে মিছিল ও পথ সভা বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করা হবে- আনিসুল হক নরসিংদী সদর উপজেলায় ব্র্যাকের নারী অভিবাসী ফোরাম সভা অনুষ্ঠিত ভারতীয় কবি পত্রলেখা ঘোষ এর একগুচ্ছ কবিতা বিএনপির কেন্দ্রীয় থেকে সংসদ সদস্য মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সৈয়দপুরে বিক্ষোভ মিছিল শিবগঞ্জের কারবালা মোড়ে দুই ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত ১, আহত ২

বাবা তোমায় ভুলিব কেমনে

Coder Boss
  • Update Time : বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৯৭ Time View

মিজানুর রহমান মিজান, সিলেট:

সুর ব্যঞ্জনার এক অভিন্ন নাম আমার বাবা চাঁন মিয়া।গান গাইলেন, মন জোগালেন,দর্শক শ্রোতা হাসালেন, কাঁদালেন।সমুজ্জল শ্যামলী বাংলার রুপ সুধা, মানবিক মুল্যবোধে মুক্ত সমাজ চিন্তক ভৌগলিক কারনে বৈচিত্রময় জীবনাচরণ,সংস্কৃতি ও প্রাণবন্ত বর্ণিলতার পথে ছিল আপনার জীবন যাত্রা ভরপুর।তরুণ বয়সেই হয়ে গেলে ভবঘুরের মতো আনন্দে মেতে উঠে।ব্যয় করলে আনন্দ আয়োজনের মধ্য দিয়ে।শত প্রতিকুলতার মধ্যেও তুমি ছিলে অনঢ, নির্ভিক ও স্থিতিশীল এক মানুষ।শত দু:খ, কষ্ট, বাঁধা-বিপত্তির মধ্যে পতিত হয়েও তুমি ছিলে এক উজ্জল প্রাণবন্ত রসিক সুজন।মুখে ছিল তোমার “no চিন্তা,do ফুর্তি” সর্বক্ষণ। লোকের জিজ্ঞাসায় প্রায়শই শুনতাম এবং লক্ষ্য করতাম অভিভুত হয়ে,এ কেমন কথা।কষ্টের পাহাড়, অত্যাচারের স্টীমরোলার জলন্ত কয়লার আগুনে উত্তপ্ততায় ও নির্লিপ্ত সাদাসিদে জবাব।আমি নিরবে বসে ভাবতাম কি অদ্ভুদ ও শান্তশিষ্টতা।জীবনের সাথে নিখাদ ভালবাসার এক অপরুপ সম্মিলন।আত্ম-বিশ্বাসে ছিলে বলিয়ান।তাই বেমালুম ভুলে যেতে সহজিয়া ভঙ্গিতে সম্পূর্ণ স্রষ্টার দরবারে সঁপে দেয়ার মগ্নতায়।
আপনি গানের সাথে প্রাণের ডুবুরী সেজে গেলে স্রষ্টার প্রতি নিবেদিত হয়ে অটুট বিশ্বাস ও আত্ম-বিসর্জনের মাধ্যমে।গাইলে বিষাদ লহরী ও ভাবুক গান।শুনতে হয়েছে অনেক উপহাস,লাঞ্চনা, বঞ্চনা ও গঞ্জনা অনেকের নিকট থেকে।আবার গান ভাবুক মানুষের ছিলে অতি প্রিয়জন।গানকে ভেবেছিলে যক্ষের ধন,পরম সম্পদ।সেসব ভাবুক গানের কথা আজো অনেকেই আমাকে বলেন, আপনাকে স্মরণ করেন তাঁদের হৃদয়ের গভীর থেকে প্রোথিত আবেগে ও আন্তরিক হৃদ্যতায়।আমি লক্ষ্য করলে পেয়ে যাই পরিচয় তাদের বুকের ভিতর থেকেই হচ্ছে উৎসারিত একেকটা গানের কথা।যেমন –‘গরিব হইলে ভবে কেউ চিনে নারে গরিব, গরিব ধনীর বাড়িত যায়, মনে মনে কইতে রয়, কোন জিনিষটা নিত আইছে করে ভাবনা,গরিব…….”।তোমার শিল্পী সত্তা প্রকৃতি প্রদত্ত।যাঁরা সে সময় ছিলেন শ্রোতা, দর্শক তাঁরা আজো ধরে রেখেছেন, স্মরণ করেন ধারা বহমানতায়।এখানেই একজন মানুষের সার্থকতা নিহিত বলে আমি মনে করি।আরেকটি গানকে প্রবীনরা বেশি প্রাধান্য দেন বলে তাঁদের কথা থেকে আমার ধারণা হয় দৃঢতর।যেমন-“একদিন নবী গেলেন সংসার ছাড়ি, কইতে না পারি”।দীর্ঘদিন পরও বিমুগ্ধ এবং মনোমুগ্ধকর কণ্ঠ যাদুতে আচ্ছন্ন মানুষের কথাবার্তায় উঠে আসে ভালবাসা ও ভাললাগার আকাশে বাতাসে ভাসমান সুর লহরীর ভাবুকতা।আরো প্রকাশ পায় “ভাবিয়া হই আকুল,নিদয়া হইয়াছরে বন্ধু শিখাইয়া পিরিতের মুল।বন্ধুয়ারে ভেবে ভেবে, নিশিদিন কাটে যবে, কলঙ্কিনি লোকে ভাবে, হইলাম সবার চক্ষুশুল”।চমৎকার প্রস্ফুটিত হয়েছে মনের গহীন থেকে বঞ্চনা, লাঞ্চনার অপূর্ব নিদর্শনের আহাজারী।স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির ব্যাকুলতা, মনের আকুতি।এ পৃথিবী এক আশ্চর্য অদ্ভুদ বিচিত্র ও সর্বাধিক চারিত্র মাধুর্যতায় ভরপুর।অপর পৃষ্টায় রয়েছে স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির অপরিসীম আরাধ্য সাধনা।সান্নিধ্য লাভের ব্যাকুলতা সমৃদ্ধ ধারায়।সময়ের ব্যবধানে অনেকটা যেন হারিয়ে যাচ্ছে উৎসুক দর্শক শ্রোতা। আমাকে প্রবাসে পাঠানোর নিমিত্তে ১৯৭৪ সালে শেষ সম্ভলটুকু বিক্রি করে লন্ডন প্রবাসী দালালকে টাকা দিয়েছিলেন।অনেক শর্ত সেখানে ছিল বিদ্যমান মৌখিক ভাবে।শর্ত দুরে থাক আমাদের আসল(মুল) টাকাও দালাল অস্বীকার করে বসলো দুই বৎসরের ব্যবধানে।একটি টাকাও পেলাম না, পাষন্ড দিল না।কি নিদারুণ বিশ্বাসঘাতকতা, মিথ্যার বেশাতী,প্রতারণা,প্রবঞ্চনা।লিখিত না থাকায় হলাম সব থেকে বঞ্চিত।পতিত হলাম দারুন কষ্ট, অসহনীয় দু:খ ও লাঞ্চনায়।তখনও দেখলাম আপনাকে অগাধ বিশ্বাস ও অবিচল আস্থা মহান আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়ে চলাফেরা করতে এবং তখনই একটি গান রচনা করলেন,“ছবর কররে মন হিসাব পাইবায় শেষের দিনে, আখেরাতে বিচার হবে সেদিন বুঝবে নিরঞ্জনে,হাকিম হইয়া দাড়াইবে লেখা থাকবে আল্লাহু উপরে, উকিল হইবেন নবী সাক্ষী না থাকিবে কেউ সেদিন বুঝবে ন্যায় অন্যায় জ্ঞানে”।
বাবা এইতো ক’দিন হলো দালালের এক উত্তরসুরী এলো আমার কাছে।আমার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে।কত টাকা হলে আমি ক্ষমা করে দেব।আমি স্পষ্ট জবাব দিলাম,দিয়েছি বাবা,“তোমাদের আত্মীয় যিনি মধ্যস্থ ছিলেন,কি কি শর্ত, কথাবার্তা ছিল, তা অবহিত আছেন!তিনিকে জিজ্ঞেস করে জেনে এবং একজন আলেমের কাছ থেকে ইসলামী রীতি অনুযায়ী যা দেবে তাই আমি মেনে নিয়ে ক্ষমা করে দেব।আমি সঙ্গে যাব না এবং কোন কথা ও বলবো না।বুঝতে গিয়ে হয়েছে নিরুদ্দেশ।ভাল করলাম না মন্দ করলাম জানেন অন্তর্যামী।
সইলে কত অত্যাচার, ছিলে তবু নির্বিকার।হইলে তুমি প্রতারিত, ভাবতে দেখতাম অবিরত।এতো ধৈর্য সবুর, মেওয়া পাবার আশা প্রচুর।মহান রবের প্রতি পূর্ণ আস্থা, নির্ভরশীলতা নিয়ে চালালে জীবন তরী নদীর অথৈ জলে।তোমার প্রতি অত্যাচার, প্রতারণার আংশিক আমি আল্লাহর কৃপায় উদ্ধারিলেও পারিনি পরিপূর্ণতায় পৌছতে।কিছু কিছু মানুষ নামের অমানুষের কবল থেকে সত্যের ঝান্ডা সমুন্নত করতে।তবে আমি পূর্ণ বিশ্বাসী আল্লাহ তায়ালা আছেন,থাকবেন সহায়তায়।তোমারই মতো অনুসরণ, অনুকরণে আছি, হতাশ হই না।প্রাপ্যতা, সততা ও সত্য মরে না।তার যথার্থতা আংশিক হলেও উদ্ধারে রয়েছে নিহিত মর্মার্থ।বর্তমান মানব সমাজে মিথ্যূকের সংখ্যাধিক্যতা বিরাজমান।আল্লাহর নবী বলেছেন,“সকল পাপের মা হচ্ছে মিথ্যা”।মানে মিথ্যা থেকেই ব্যক্তিগত, সাংসারিক,সামাজিক ও আন্তর্জাতিক সকল প্রকার অপকর্ম ও কুকর্মের জন্ম।ব্যক্তি চরিত্রের ধবংসের পিছনে মিথ্যা আছে ঠায় দাড়িয়ে।এ জন্যই জ্ঞানী-গুণীরা বলেছেন,“সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস,অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ”।মানুষের চারিত্রিক অবক্ষয়ের কারনে কোথাও শান্তি নেই।অধিকাংশ মানুষ স্বার্থপরতা,প্রতিহিংসা,অহংকার,পরনিন্দা,পরশ্রীকাতরতা,লোভী ও মিথ্যাশ্রয়ী।ইসলামের মুলমন্ত্র ও কুরানের মর্মবাণী হচ্ছে,প্রত্যেক মানুষ একমাত্র আল্লাহর মুখাপেক্ষী হবে আর কারো নয়।মানব সভ্যতার জন্য মিথ্যা এমন এক অভিশাপ যা মানুষকে পশুতুল্যে নিমজ্জিত করে ছাড়ে।মানুষ যখন সত্যকে পরিহার করে তখনই মিথ্যার গহব্বরে পতিত হয়।হারিয়ে ফেলে সঠিক ও সত্য পথ।
আমার প্রতি আপনার ছিল অপরিসীম ভালবাসা,আস্থা,ভরসা।আমি মুগ্ধ হতাম আপনার কথায় যখনই দ্বারস্থ হয়েছি কোন সমষ্যা নিয়ে।যেমন লেখাপড়ার বিষয়ে জানতে চাইতাম কোন বিষয়ে, কোন বিভাগে লেখাপড়া করলে ভাল হবে।সরল সোজা জবাব ছিল,“তুমি যা ভাল মনে কর তাই কর”।অথবা কোন বিষয়ে পরামর্শ চাইলে আপনার জবাব ছিল, আল্লাহকে স্মরণ করে, নির্ভরশীল হয়ে নিজ আগ্রহ,আত্ম-বলে বলিয়ান হয়ে পথিক হতে।যেখানে যে পথে হয়েছি আগুয়ান,সুফল এসেছে বরাবর।আপনার এতেও দারুণ বিশ্বাস ও আশা ছিল, আমার দ্বারা কোন মন্দ কাজ সংগঠিত হবে না।অযথা কোন ব্যয় হবে না।এ পর্যন্ত জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে নির্ভেজাল থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।বাকি জীবনটুকু এ ভাবেই চলার আশা, প্রত্যাশা রাখি মহান আল্লাহকে স্মরণ ও নির্ভরশীল হয়ে থাকতে।আল্লাহ সর্বশক্তিমান।আর আপনার দোয়া আমার একান্ত পথের পাথেয়।
আপনাকে সর্বদা মনে পড়ে,যেখানে যাই,যাহাই করি।আপনি আমার সকল ক্ষেত্রে প্রেরণাদাতা, জন্মদাতা পিতা। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকামে স্থান দিতে নিরন্তর দোয়া করি কায়মন বাক্যে।

লেখক:
মিজানুর রহমান মিজান,চাঁন মিয়া স্মৃতি পাঠাগার, রাজাগঞ্জ বাজার, বিশ্বনাথ, সিলেট।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102